কোটা সংস্কার আন্দোলনে বন্দুকের গুলিতে শহিদ হওয়া সাদিকুর রহমনের বাড়িতে এখনো কাটেনি শোকের মাতম। সন্তানের কথা মনে হলেই ছবি বুকে ধরে কবরের কাছে চলে যায় তার মা। ছেলেকে হারিয়ে আবেগে বিলাপ করে যেন পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে সদিকুরের মা। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ফুলমালির চালা গ্রামে। সাদিকুর রহমান গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ঢাকা উত্তরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে বন্দুকের গুলিতে মারা যায়। সে আব্দুল্লাহপুর এলাকার জামিয়া দ্বিনী ইসলামিয়া মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সখীপুরের সীমান্তবর্তী ফুলমালির চালা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাদিকুর তার এক বন্ধুর সাথে ঢাকার উত্তরা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ওই দিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সাদিকুরসহ দুই শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসায় না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দিনভর খোঁজখুঁজি করে তাদের না পেয়ে ওই রাতেই বিষয়টি প্রত্যেকের পরিবারকে জানায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্ন থানা ও হাসাপাতালে খোঁজ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় জানতে পারে সাদিকুর মারা গেছে। উত্তরা অধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ। ওই রাতেই তার পরিবারের লোকজন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে সাদিকুরের লাশ এবং রবিরার সকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাদিকুররে চাচা প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, সাদিকুরের পিঠে একটি গুলির চিহ্ন ছিলো। পিঠ বেধ করে নাভির পাশে আটকে আছে বুলেট। তৎকালীন ভয়াবহ আন্দোলনে কারণে আমরা থানায় অভিযোগ করতে পারিনি। এ ছাড়া ওর বাবা বিদেশে থাকে। এ বিষয়টি ঢাকা উত্তরা ও টাঙ্গাইলে আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়করা জানেন। তাদের কাছে ওর প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে।
সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, সাদিকুর বলতো মা আমি একদিন বড় মওলানা হবো, তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া কইরো মা। ওরা আমার বাবার স্বপ্নটা পূরণ হতে দিলো না। বন্দুক দিয়া গুলি কইরা আমার বাবারে মারছে। পেট থেকে বন্দুকের গুলিটাও বের হতে পারে নাই। মৃত্যুর সময় আমার বাবা না জানি কত ছটফট করছে। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আমি বর্তমান সরকারের কাছে এর বিচার চাই। আমার মতো শতশত মায়ের বুক যারা খালি করছে তাদের বিচার করুন।
ইউপি মেম্বার মো. মজিবর রহমান বলেন, ছেলের জন্য সারাদিন কান্না করে সাদিকুরের মা পাগলের মত হয়ে গেছে। এসব দেখে আমরা যারা প্রতিবেশি স্বজন আছি তারা খুব কষ্ট পাই। খুব হৃদয় বিদারক ঘটনা।
বিডি প্রতিদিন/এএ