সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে গিয়ে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের রশিবপুরা গ্রামের গিয়াস হাওলাদারের পুত্র নাসির হাওলাদার নামের এক যুবক। সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১০টার দিকে নাসিরকে প্রথমে ছুরি দিয়ে আঘাত করার পর গলাকেটে হত্যা করে সৌদির এক নাগরিক। এ ঘটনার সাথে জড়িত সেই সৌদি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। এদিকে নাসিরকে গলাকেটে হত্যার খবর তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছালে স্বজনসহ কান্নার রোল পড়ে যায়।
নিহতের চাচাতো ভাই মনির হাওলাদার জানান, ৭ বছর আগে ভাগ্য ফেরাতে সৌদিআরবে যায় নাসির। বেশ কয়েক বছর সে লেবারের কাজ করতো। পরে সে ভাড়ায় গাড়ি চালানোর কাজ করতো। সে দাম্মাম শহরে গাড়ি চালাতো। সোমবার সকালে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়। স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি রেখে নাসির চা খাওয়ার সময় সৌদি এক যুবক সেখানে গাড়ি পার্কিং করে। এ নিয়ে সৌদি নাগরিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সৌদি নাগরিক নাসিরকে ধারালো চাকু দিয়ে পিঠে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করা হয় নাসিরকে। ঘটনার পর বেশ কিছু সময় নাসির রাস্তায় পড়েছিল। এসময় কেউই নাসিরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি।
পরে সৌদি পুলিশকে ফোন দিলে তারা নাসিরের লাশ নিয়ে যায় এবং ঘটনার সাথে জড়িত খুনিকে গ্রেফতার করে। এদিকে, নাসিরকে খুন করা হয়েছে এমন খবর তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে একহৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। নাসিরের স্বজনরা জানান, ছোটবেলায় নাসিরের বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাবার পর সে তার মা, ভাই-বোনদের সংসার চালানোর জন্য শ্রমিকের কাজ করছিল। মা-, দুই ভাই, তিন বোন এবং স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ কষ্টের মধ্যে দিন কাটছিল তার। একসময় এলাকার মানুষের সহযোগীতা এবং জমি বিক্রি করে একযুগ আগে নাসির সৌদিআরবে পারি জমায়। সেখানে প্রথমে সে লেবারের কাজ করতো। পরে দাম্মাম শহরে ভাড়ায় গাড়ি চালাতো।
মঙ্গলবার দুপুরে নাসিরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন শতাংশ জমির উপর ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বসে আছেন তার স্ত্রী সীমা বেগম, ১০ বছরের বড় সন্তান জিসান ও সাত বছরের সন্তান সিজান। সেখানে ভিড় জমিয়েছে আশে পাশের বেশ কিছু মানুষ। নাসিরের মা ও স্ত্রী চিৎকারে আকাশ বাতাস ভাড়ি হচ্ছিল। অনেকেই তাদের শান্তনা দিলেও তাদের কান্না যেন কিছুতেই থামছেনা।
নিহতের স্ত্রী শিমা আক্তার বলেন, এখন আমার কি হবে, দুটি অবুঝ সন্তান রয়েছে তাদেরকে কে দেখবে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। আমার অবুঝ সন্তানের কি হবে। যে খুনি আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তার ফাঁসি চাই।
ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছিন কবীর জানান, নাসিরের লাশ দেশে আনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। এ হতদরিদ্র পরিবারটিকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহযোগীতা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল