কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে হক্ব ও তরিকতপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ সময় একটি মসজিদ ও মাজার ভাঙচুর করা হয়। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী বাজারে ঈদে মিলাদুন্নবী কেন্দ্রীক জশনে জুলুস মিছিলকারী এবং ইমাম ও উলামা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সারোয়ার জাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তি কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী পূর্বপাড়া গ্রামের জমির উদ্দিন জাবু মিয়ার ছেলে মীর মোহাম্মদ মিলন। তিনি কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্য। সংঘর্ষ চলাকালে তরিকতপন্থীরা ছয়সূতী বাজার জামে মসজিদ এবং হক্বপন্থীরা সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজার ভাঙচুর করে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারে ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে বাধা দেন কুলিয়ারচর ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতারা। ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরীর। তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ বিষয়ে ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতারা একটি চিঠি দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী কুলিয়ারচরে আসেননি।
এদিকে ইমাম ও উলামা পরিষদ এবং তরিকতপন্থীদের মধ্যে যাতে কোন রকম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেয় কুলিয়ারচর প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তরিকতপন্থীরা সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জশনে জুলুসের মিছিল বের করে। মিছিলটি ছয়সূতী বাজার এলাকায় না যাওয়ার কথা থাকলেও তারা মিছিল নিয়ে বাজারে ঢুকে পড়ে। অপরদিকে ছয়সূতী বাজারে খাদেমুল ইসলাম হোসাইনীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় সিরাত মাহফিলের কথা ছিল। এ সিরাত মাহফিলও বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। টানা ২/৩ দিন এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতা মুফতি নাছির উদ্দিন রহমানিয়া জানান, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিরাতুন্নবী মাহফিল বন্ধ রাখি। বেলা ১১টায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বাজারের একজন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের এতো নজদারির পরও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি একটি ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারের খাদেম সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন বলেন, আমাদের এখানে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থী তাতে বাধা দেয়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তা মেনে নিলেও আজ আমাদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। মাজার ঘরটি ভাঙচুরসহ আরো ১০টি বাড়ি ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার দাবি করেন।
এদিকে নিহতের ভাতিজা মীর মোহাম্মদ ইকরাম জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর শুনে তার চাচা সংঘর্ষ ফেরাতে যান। সেখানে আহত হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, সেনাবাহিনীসহ পুলিশ সদস্যরা অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একজন গুরুতর আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হলে পরে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। এ ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল