পটুয়াখালীতে বড় ছেলের উপস্থিতিতে সালিশদারদের মারধরে এক বৃদ্ধ বাবার মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৬৮)। আজ বেলা ১১টায় দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেহালগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর ছেলে ও তার স্ত্রীসহ সকলে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে কহিনুর বেগম বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে দশমিনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।
নিহতের মেয়ে কহিনুর বেগম ও সালিশ বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুরুল ইসলাম হাওলাদারের বখাটে ছেলে শাহজাহান হাওলাদার বসতবাড়ী করার জন্য দির্ঘদিন ধরে তার বাবার কাছে জমি লিখে দেয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। ছেলে চাহিদামত জমি বাবা লিখে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বহরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য রাকিবুল হাসান সোহাগ, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রহিম বেপারী, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মৃধা ও সাধারন সম্পাদক মোঃ কাইয়ুম গাজীর কাছে বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ছেলে শাহাজান হাওলাদার। পরে ছেলে শাহজাহান তার স্ত্রী রুনু বেগম তার ভাই রিপনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে স্থানীয় নেতাদের সালিশ করতে বাড়ীতে নিয়ে আসে।
নিহতের মেয়ে কহিনুর বেগম আরও জানান, ভাই শাহজাহান বাড়ী করতে চাইলে এর আগে আব্বা তিনটি জমির যেখানে বাড়ী করবে সেখান থেকেই জায়গা দিতে চায়। কিন্তু ভাই রাস্তার পাশের জমি চাইলে আব্বা দিতে রাজী হয়নি। কারন সেখানে চাচারাও জমি পাইবে। এর পর সকালে বড় ভাই শাহজাহান ও তার স্ত্রী রুনু বেগম ও তার ভাই রিপন মিলে এদের সবাইকে শালিশের কথা বলে বাড়ীতে নিয়ে আসে। এ সময় বাবা নুরুল ইসলাম দোকানে গেলে তারা স্থানীয় চৌকিদারদের ডেকে আনতে বলে এবং বাবা আসতে না চাইলে তাকে ৭-৮ জন মিলে বেধরক লাথি-কিল-ঘুষি মারতে থাকলে প্রান বাচাতে আব্বা পাশের খাদায় (ডোবা) ঝাপ দেয়। পানি থেকে উপরে তোলার পরে আব্বা নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাবাকে স্থানীয়রা উপরে তুলে আনার পর দশমিনা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত নুরুল ইসলামের ছোট ভাই রুহুল আমীন হাওলাদার মোবাইল ফোনে জানান, ‘নেতাদের মাইর সহ্য করতে না পেরে ভাই আমার পাশের ডোবায় ঝাপ দেয়। পরে ভাইয়ের দেহ টেনে তোলার পর দেখি তিনি কোন শব্দ করেনা তখন আমি চিৎকার করি আমার ভাইকে মাইরা ফালাইছে। এসময় নেতারা মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়। শালিসির নামে নেতারা আমার ভাইকে পিটিয়ে মারছে।’
নিহত নুরুল ইসলামের মেজ ও ছোট দুই ছেলের বৌ সাথী বেগম ও চাদঁনী বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘উপস্থিত সালিশদাররা সবাই মিলে আমার শশুরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাঃ রাহুল বিন হালিম জানান, ‘নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন তাকে মারধর করা হয়েছিল।’
ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে এবং নিহত নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. শাহ আলম শানু বলেন, ৭ই নভেম্বরের প্রোগ্রাম নিয়ে আমি উপজেলা বিএনপি অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। এসময় কয়েকজন আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীও প্রতি শালিস বৈঠক না করার জন্য বিএনপির হাই কমান্ড থেকে নির্দেশ ছিল। এ ধরনের ঘটনার সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে সেটা তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাদের দায় দল কখনও নেবে না। তবে বিএনপির কোন নেতা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
দশমিনা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ আবদুল আলীম বলেন, নিহত নূরুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে কহিনুর বেগম বাদী হয়ে কাইয়ুম গাজীকে প্রধান আসামী করে মোট ৬ জনকে আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম