এক সময় ঝুট কাপড়কে আবর্জনার মতোই ফেলনা মনে করা হতো। তবে এ কাপড় আর ফেলনা নয়, এই ঝুট কাপড় থেকে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পাপোশ। আর এই পাপোশ তৈরির কারখানা করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন নওগাঁর বদলগাছীর শাহিন হোসেন (২৫) নামে এক যুবক। শুধু তাই নয়; ওই কারখানায় নারীরা কাজ করে বাড়তি আয় করে সংসারে ফিরিয়েছেন স্বচ্ছলতা।
সফল উদ্যোক্তা শাহিন হোসেন বলেন, নওগাঁর বদলগাছীর ভান্ডারপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার চলাকালে জেএসসি পরীক্ষার সময় কামরুন নাহার শেমার সাথে প্রথম পরিচয় হয় তার সাথে। দুজনে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করার পর ওই পরিচয়ের সুবাদে শুরু হয় প্রেম। এরপর ২০১৭ সালে বদলগাছী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে শাহিন। এভাবেই চলে সাড়ে ৩ বছর। ওই বছরেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। সেই সংসার চলে ২০২০ সাল পর্যন্ত। ২০২১ সালের প্রথম দিকে কামরুন নাহার শেমা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আবারও নতুন প্রেমিকের হাত ধরে ওই বছরেই চলে যায়। যাওয়ার সময় শাহিনের টাকা নিয়ে যায় কামরুন নাহার শেমা। এরপর শাহিনের মাথায় হাত। আকাশ ভেঙ্গ পড়ে মাথায়। তখন তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। বাবা রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে তিনি তার এক বন্ধুর পরামর্শে শখের বাইক বিক্রি করে ৪টি সেলাই মেশিন ও ১টি দড়ির মেশিন কিনে শুরু করেন ঝুট কাপড় দিয়ে পাপোশ তৈরি ব্যবসা। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই কারখানার মাধ্যমে নিজের ভাগ্যই শুধু নয়, কর্মসংস্থান সুয়োগ সৃষ্টি করেছেন নারীদের। বর্তমানে তার কারখানায় রয়েছে ১২০টি মেশিন। প্রতিদিন তার এই কারখানায় তৈরি হচ্ছে দুই হাজার পিস পাপোশ। এসব পাপোশের চাহিদা থাকায় পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে তার এই কারখানায় প্রতিদিন কাজ করেন ৭০ জন নারী শ্রমিক ও ৪ জন পুরুষ শ্রমিক। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি তার এই কারখানায় কাজ করে বাড়তি আয় করছেন ওইসব নারীরা। অনেকের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। প্রতি মাসে এই কারখানায় পাপোশ বিক্রি করে থাকেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার। আর সেখান থেকে আয় হয় প্রায় লাখ টাকা। তবে বড় কথা হলো তিনি এখনও পড়াশোনার হাল ছেড়ে দেননি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ লেখাপড়া করছেন। তিনি আরো বলেন, এই কুটির শিল্পকে এগিয়ে নিতে পাপোশগুলো বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করলে ব্যবসার প্রসার বাড়বে। আরো শত শত বেকার নারীদের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তাই তিনি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেন।
কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক শাপলা খাতুন বলেন, বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার শাওইল বাজার থেকে সুতা আনা হয়। সেই সুতা মেশিনে দিয়ে দড়ি বানানো হয়। আবার সেই দড়ি মেশিনে দিয়ে পেচিয়ে পাপোস তৈরি মূল উপাদান তৈরি করা হয়। শেষে সেসব দড়ি বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের পাপোশ তৈরি করা হয়। যেমন কচি পাপোস, ফ্রেস পাপোস, টেবিল ম্যাপ পাপোশ। ওইখানে কর্মরত নারী শ্রমিক নাজমা জানায়, তিনি এই কারাখানায় দীর্ঘ ৩ বছর থেকে কাজ করছেন। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। তা দিয়ে খুব সুন্দর সংসার চলে যায়। এমনকি এই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা খরচ চালানো হয়। আরেক নারী শ্রমিক আসমা জানায়, আগে বেকার ছিলাম। স্বামীর উপার্জনের টাকা দিয়ে আগে সংসার চলতো না। আর গত দুই বছর থেকে এই পাপোশের কারখানায় কাজ করে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে। কোন কষ্ট পোহাতে হয় না। এমনকি কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আল্লাহ খুব ভালো রেখেছে। নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, স্বল্পসুদে ঋণ এবং এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিদেশে রপ্তানি করারও আশ্বাস দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ