উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারসহ সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার–মহেশখালী উপজেলা, মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুটে যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
লোকালয়ে জোয়ারের পানিতে ডুবে দানু মিয়া (৪২) নামের এক মৃগী রোগী মারা গেছেন। তিনি স্থানীয় নূর হোসেনের পুত্র। বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রিমন উদ্দিন জানিয়েছেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে জোয়ারের পানিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান দানু মিয়া। তাকে উদ্ধার করে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলছেন, নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বৃষ্টি বাড়বে, তবে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা নেই। গভীর নিম্নচাপটি কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর পরেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ১–২ দিন থাকবে।
নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলার আলীর আকবর ডেইল, মহেশখালী উপজেলার মাতাবাড়ী, ধলঘাটা, ছোট মহেশখালী, ঘটিভাঙা, শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে মোট ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। বুধবার টেকনাফে দেশের সর্বোচ্চ ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বিপাকে কক্সবাজার সৈকত পাড়ের ব্যবসায়ীরা
কক্সবাজার সৈকতে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস। নেই কাঙ্ক্ষিত পর্যটক। যার কারণে একপ্রকার বন্ধ সৈকত পাড়ের ব্যবসা। সৈকত পাড়ের ফটোগ্রাফার থেকে কিটক্যাট, জেট স্কি, বিচ বাইক চালক ও ঘোড়াওয়ালারা অলস সময় পার করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লাবণী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন রেজাউল, আল আমিনসহ কয়েকজন। তাদের কেউ সকাল থেকে আয়ের মুখ দেখেননি।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় বন্ধ রয়েছে শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। যার কারণে দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে হাজারের অধিক দোকানপাট রয়েছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে এক প্রকার বন্ধ রয়েছে সব ব্যবসা।
উত্তাল সাগরে ঢেউ আছড়ে পড়ছে ঝাউবনে
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে যাওয়ায় বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতের ঝাউবাগান ও জিও ব্যাগের ওপর। ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে পড়েছে অনেক ঝাউগাছ। প্রবল ঢেউ জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ছে ঝাউগাছের ভেতরে। অনেকে জিও ব্যাগের ওপর বসে থাকার সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন পর্যটক সাগরে নামার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিশাল ঢেউ দেখে পিছিয়ে যান। কেউ কেউ আবার উত্তাল সাগরকে পেছনে রেখে ছবি তুলে ফিরে গেছেন।
বাধা মানছেন না পর্যটকরা
বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল সমুদ্র উপভোগ করছেন কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা। সমুদ্র পাড়ে জড়ো হয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ উত্তাল সমুদ্রেই গোসলে নেমেছেন। পর্যটক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘সাগরের এমন রূপ আগে কখনও দেখিনি। এতো বিশাল ঢেউ দেখে ভয় লাগলেও সৌন্দর্য উপভোগ করছি। গোসল করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু লাইফ গার্ড নামতে দেয়নি।’
সৈকতের দায়িত্বে থাকা লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, জোয়ারের সময় ঢেউ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পানির উচ্চতা এখন ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি। নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে সাগরে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফ গার্ড ও বিচ কর্মীরা মিলে পর্যটকদের সতর্ক করছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল