ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। চমৎকার পরিবেশ ও আবহাওয়াকে সঙ্গে করে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। পর্যটকের আনাগোনায় মুখর লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি পয়েন্ট। ঈদের লম্বা ছুটির চতুর্থ দিন বাঁধ ভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কেটেছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত।
ঈদের দিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক ভ্রমণের আসার তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা আরও বলছেন, আগামী শনিবার (১৪ জুন) পর্যন্ত ছুটি থাকায় আরও পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কয়েক দিনে সৈকতে ঘুরে দেখা যায়, একদিকে সূর্য ডুবছে অন্যদিকে দলে দলে পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে সাগর তীরে নামছে পর্যটকরা। কেউ সমুদ্রস্নান করছে, কেউ বালিয়াড়িতে ছবি তুলছে, কেউবা চড়ছে ঘোড়ার পিঠে কিংবা বিচ-বাইকে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ উপভোগ করছে সূর্যাস্ত। ডুবন্ত সূর্যের সঙ্গে সাগরকে পেছনে রেখে তুলছেন ছবিও।
ভ্রমণে আসা এসব পর্যটকের কাছে উপেক্ষিত হয়েছে রোদ, বৃষ্টি ও উত্তাল সাগর। কখনো তীব্র রোদে আবার কখনো বৃষ্টিতে ভেজে উত্তাল সাগরের ঢেউর তালে শরীর ভাসিয়েছেন এসব পর্যটক। লাইফগার্ড কর্মীদের লাল পতাকা উত্তোলন ও সতর্কতা মাইকিংয়ের প্রাণপণ চেষ্টাও পর্যটকদের দমাতে পারছে না। সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে অনেকেই উত্তাল সাগরে নেমে পড়ছেন। আর এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অসাবধানতাবশত সমুদ্র সৈকতে ডুবে চার পর্যটকসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজারে ১২ লাখ পর্যটক এসেছিলেন। হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান, শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছসহ ১৩টি খাতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে আট লাখ পর্যটকের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হতে পারে। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখের মতো পর্যটক কক্সবাজার ঘুরে গেছেন।
ফেনী থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা হাসিব বলেন, ‘সকাল থেকেই বিচে আছি, ভালোই লাগছে। অনেক মানুষ, স্বাভাবিক পথ চলতে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। হোটেলের পরিবেশ খাবারদাবার সবকিছু পজিটিভ। ’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আওলাদ হোসেন কেনেডি জানান, ঈদের আগেই কক্সবাজারের অধিকাংশ আবাসিক হোটেল শতকরা ৭০ ভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন কক্সবাজারে শতভাগের কাছাকাছি রুম বুকিং চলছে। তিন দিনে পর্যটকের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছেন।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৯ জুন থেকে প্রতিদিনই কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করছে লাখো পর্যটক। যার কারণে হোটেলের বুকিং হয়েছে আশানুরূপ। এবার অন্তত ৭-৮ লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঈদ আনন্দটা কক্সবাজার আসলে আরো বেড়ে যায় জানিয়ে পর্যটক সিনহা বলেন, সুযোগ পেলেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসি। এখানে আবহাওয়া অনেক ভালো। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি; তখন আনন্দের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেছে।
বর্তমানে সাগর উত্তাল। কয়েকটি পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। রয়েছে উল্টো স্রোতের টান। যার কারণে পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মীরা। পর্যটকদের আগমন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণকে আনন্দমুখর করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে পুলিশ অবস্থান করছে। একদিকে মোবাইল টিম অন্যদিকে সাদা পোশাকে পুলিশ সমুদ্র সৈকতে ঘুরছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, ঈদের ছুটিতে একাধিক মোবাইল টিম পর্যটকদের সব ধরনের হয়রানি রোধে মাঠে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম