সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া দুই জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলছে ইছামতি নদী। কালের বিবর্তনে নদীটির প্রশস্থতা কমলেও এখনো রয়েছে গভীরতা। সারাবছরই নদীতে গভীর পানি থাকে। নদীটির পূর্বপাড়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একডালা ঘাট অত্যন্ত অপরপ্রান্তে রয়েছে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার খাটিয়ামারি। এ ঘাট দিয়েই দুই জেলার তিনটি উপজেলার অর্ধশত গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চলাচল। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটিতে আজও নির্মাণ হয়নি সেতু। সুগভীর এই নদীর উপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষকে। স্বাধীনতার পর থেকে এমপি মন্ত্রীরা এসে শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। বার বার মাপঝোপ করেও সেতু হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে ৯৫ মিটার একটি ব্রিজের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে বলে এলজিইডি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটি আর কাঠের পাটাতনে তৈরি সাঁকোটিতে সাইকেল উঠলেই নড়ে উঠছে। পায়ে হেঁটে গেলেও লাফিয়ে ওঠে পাটাতন। নড়বড়ে এই সেতুটি দিয়ে অটোভ্যান চলাচল করলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
স্থানীয়রা জানান, একডালা ঘাট দিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা, ফুলবয়ড়া, ভেন্নাবাড়ি, ক্ষুদ্র বয়রা, মহিষামুড়া, কুড়িপাড়া, কুড়ালিয়া, বাগবাটি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া, হরিণা, দত্তবাড়ি ও কাজিপুরের উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের কালিকাপুর, খুকশিয়া এবং বগুড়া জেলার ধনুট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের গজিয়াবাড়ি, দিশারদিয়ার, খাটিয়ামাড়ি, সেউলিয়াবাড়ি, দেউড়িয়া, আড়িয়ামোহন, কোনাগাঁতী ও মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর, পিরাহাটি ও কাশিয়াহাটাসহ মোট ৪৫/৫০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হয় এ ঘাট দিয়েই। বাগবাটি, রতনকান্দি, মহিষামুড়া, একডালা হাট, খাটিয়ামারি বাজার, মথুরাপুর হাটে কেনাবেচা করতে এ ঘাট পেরিয়েই যেতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ ঘাটটিতে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় যুগের পর যুগ ধরে লাখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদীতে যখন বেশি পানি থাকে তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়। আর পানি কিছুটা কমলে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল করতে হয়। বছর খানেক আগে একটি শিশু স্কুলে যাওয়ার পথে বাঁশের সাঁকোর চার উল্টে নদীতে পড়ে মারাও গেছে। এছাড়াও প্রতিদিন ছোটবড় দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে পথচারিরা।
সাঁকো পার হতে হতে বৃদ্ধা রহিমা খাতুন বলেন, ভাঙা ব্রিজে চলাফেলা করা মুশকিল। চার ভাইঙ্যা মানুষ পড়ে যায়। দুই বছর আগে একটি বাচ্চা চারের উপর থেকে পড়ে মারা গেছে। আল্লাহর দোহাই লাগে ব্রীজটা করে দেন।
বৃদ্ধ আমজাদ হোসেন বললেন, স্বাধীনের পর থেকে দেখছি শুধু পানি মাপে আর জায়গা মাপে। কিন্তু ব্রিজ হয় না।
পথচারি চাঁন মিয়া বলেন, ৮/৯ বছর ধরে ব্রিজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেকউ ব্রিজ করে দেয় নাই। আমরা খুব কষ্ট করে পার হচ্ছি। গত সরকারের আমলে ইঞ্জিনিয়াররা এসে দেখে গেছে। কিন্তু কি জন্য ব্রিজ হয় না সেটা আমরা জানিনা।
নার্সারী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা নদী পার হয়ে বাগবাটি হাটে রেগুলার বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা বিক্রি করি। এই বাশের চারের ব্রিজ দিয়ে কি চলাচল করা যায়। আমি পঞ্চাশ বছর ধরেই এই অবস্থা দেখছি।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান জানান, আমাদের এলজিডি কর্তৃক অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় একডালা দক্ষিণপাড়া আরএইচডি জিপিএস ও খাটিয়ামারি জিপিএস ৯৫ মিটার একটি ব্রিজের প্রস্তাবনা দেয়া আছে। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করবো। প্রকল্প পাস হলে ব্রিজটির কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ