রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে। কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়মের সুযোগ থাকবে না। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। কোর কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএমসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সীমান্ত পরিস্থিতি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হতো। এবার তা হবে না। এবার যে কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া মাত্রই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর উত্তরা পূর্ব থানার ওসির ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘যে-ই হোক না কেন, দায়িত্বে অবহেলা বা রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখালে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেওয়া হবে। এতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ বিগত সরকারের সময়ে যারা ওসি ছিলেন, তাদের অনেকে এখনো দায়িত্বে রয়েছেন। এই প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অধিকাংশকে পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। প্রথমে যারা তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে বাকিদের পরিবর্তন করা হবে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। একসঙ্গে সবাইকে বদলি করা সম্ভব নয়। তবে বিকল্প পাওয়া গেলে তাদের পরিবর্তন করা হবে। নতুন রিক্রুট করে সঙ্গে সঙ্গে বসানোও সহজ নয়।’ পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আল্লাহ চাইলে পুলিশ কমিশন গঠিত হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন অনেক সময় উসকানিমূলক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ছড়ানো হয়, যার বেশির ভাগেরই কোনো সত্যতা নেই। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রতিবেদন সাধারণত সত্য হয়। তাই সাংবাদিকরাই এসব উসকানিমূলক বক্তব্য প্রতিহত করতে পারেন।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচাই করুন। তারপর সত্য সংবাদ প্রকাশ করুন। তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্থিতিশীল থাকবে।’ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘উসকানিমূলক প্রচারণাগুলোর অনেকগুলো দেশের বাইরে থেকে হয়। তবে দেশে বসেও দু-একজন করছে। যারা করছে, তাদের পুলিশ ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এনেছে।’ রাউজানে অভিযানের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামের রাউজানে অভিযান চালিয়ে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাউজান ও ফটিকছড়ি এলাকা কিছুটা দুর্গম। অপরাধীরা অপরাধ করে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। তবে এসব এলাকা নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কার্গো ভিলেজে আগুন ও অস্ত্র চুরির তদন্ত : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর সাতটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র চুরির খবর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অস্ত্র সত্যিই চুরি হয়েছে কি না তা তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে। যদি চুরি হয়ে থাকে, তবে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রত্যেক দুর্ঘটনার পর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তবে তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে কতটি অস্ত্র চুরি হয়েছে।
পালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের ফেরানোর উদ্যোগ : সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গেছেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তারা অপরাধী। সুযোগ পেলে যে কোনো সময় দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আপনারা বিদেশে গেলে প্রশ্ন তুলুন তোমরা এই অপরাধীদের কবে ফেরত দেবে? আমাদের কাছে তারা সবাই অপরাধী।’
ই-গেট চালু, ছোট সমস্যা সমাধান হবে : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ছোটখাটো কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করা হবে।
৪৮ হাজার পুলিশ সদস্যের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের ৪৮ হাজার ১৩৪ জন সদস্য এ পর্যন্ত নির্বাচনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণের ওপর ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের প্রায় দেড় লাখ সদস্য আগামী সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরীক্ষিত হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল হিসেবে গড়ে তোলাই নির্বাচনি প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পুলিশের চলমান নির্বাচনি প্রশিক্ষণ নিবিড় তদারকির মাধ্যমে পরিচালনার জন্য পুলিশের সব ইউনিট প্রধানকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যথাযথভাবে মনিটর করা হচ্ছে। আইজিপি মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য গত রবিবার রাজশাহী ও বগুড়া সফর করেছেন। তিনি নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। চলমান নির্বাচনি প্রশিক্ষণ আগামী মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুলিশ সদস্যদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন এবারই প্রথম।