রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার জন্য জাতীয় নীতিমালা ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে জাস্টিস ফর অল ও বার্মা টাস্ক ফোর্স। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। এর আগে একই দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এই দুই সংগঠন। তাদের দাবিগুলো হলো- রোহিঙ্গা শিক্ষার জন্য একটি একীভূত জাতীয় নীতিমালা নির্দেশনা জারি; স্বীকৃত সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যা উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত করবে এবং মার্কিন মুসলিম ত্রাণ সংস্থাগুলোকে শিক্ষা উদ্যোগে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দুটির সভাপতি ইমাম আবদুল মালিক মুজাহিদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে সহানুভূতি দেখিয়েছে, তা বিশ্বের আর কোনো দেশ দেখায়নি। এখন পরবর্তী সেতু নির্মাণের সময় এসেছে, একটি সুসংহত ও স্বীকৃত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিতে কাজ করতে জাস্টিস ফর অল প্রস্তুত আছে। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বার্ষিক অনুদান রোহিঙ্গা শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে পারে। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ নারী স্কুল-যুগের। অথচ তাদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের সাবেক চেয়ারম্যান নাদিন মানজা বলেন, বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষা প্রদান কেবল মানবিকতার কাজ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। অশিক্ষিত প্রজন্ম নির্ভরতা ও অনিরাপত্তা বাড়াবে, কিন্তু শিক্ষিত প্রজন্ম উভয় দেশের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে অবদান রাখতে পারবে।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়া লজ্জার : ভ্যাটিকান মন্ত্রী
বাংলাদেশে সফররত ভ্যাটিকানের সমন্বিত মানব উন্নয়নমন্ত্রী কার্ডিনাল ফেলিক্স মাইকেল চেরনি বলেছেন, বছরের পর বছর রাষ্ট্রহীন, বেকার ও বন্দি জীবন কাটানো সত্যিই অসহনীয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারেনি এটা সত্যিই লজ্জার ও দুঃখজনক। গতকাল ক্যাথলিক বিশপস সেন্টার অব বাংলাদেশ (সিবিসিবি) সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ভ্যাটিকান মন্ত্রী বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সঙ্গে এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছি। দুই জায়গার অবস্থা অত্যন্ত কঠিন। বিশ্বজুড়ে মনোযোগ ও সহায়তা দুটিই কমে গেছে। কিন্তু এখন সহানুভূতি কমানোর সময় নয়, বরং বাড়ানোর সময়। সব সংস্থাকেই তাদের বাস্তব প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে আসতে হবে এবং যারা কষ্ট পাচ্ছে, তাদের পাশে থাকতে হবে। আমরা সাহায্য করছি এবং আমাদের সাহায্য অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ সফরকালে কার্ডিনাল চেরনি নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেন এবং কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি রাস্তার শিশু, স্বেচ্ছাসেবক ও কারিতাস বাংলাদেশের কর্মীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং সহমর্মিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া মূল ভূ-খণ্ডের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ফ্রানচেসকা দোনা, রাজশাহীর বিশপ জার্ভাস রোজারিও প্রমুখ।