কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার তদন্ত থমকে গেছে। মামলাটির বর্তমান তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আসামিদের সংশ্লিষ্টতাসহ অন্যান্য কাজ শেষ করলেও দুই কারণে চার্জশিট দাখিল করতে পারছে না। প্রথমত চার্জশিট দিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ডিএনএ রিপোর্ট দিতে কলকাতার সিআইডি পুলিশ সাড়া দিচ্ছে না। একাধিকবার চিঠি দেওয়ার পরও ‘দেবো’ ‘দিচ্ছি’ করে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এজন্য ডিএনএ রিপোর্ট চেয়ে আগামী সপ্তাহে আবারও চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশের সিআইডি। এ ছাড়া মামলার বাদী এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের খোঁজ পাচ্ছে না তদন্তকারীরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা ডরিন। স্বজনদের বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করেও ডরিনের সহযোগিতা পাচ্ছে না সিআইডি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, কলকাতা সিআইডি যতদিন পর্যন্ত ডিএনএ রিপোর্ট দেবে না, ততদিন পর্যন্ত মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। যেহেতু সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে কবে তাদের কাছ থেকে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার জন্য। পাশাপাশি ঘটনাটি কলকাতায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেখানকার সিআইডির পরিদর্শক কৌশিকের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, এমপি আনারের মেয়ে ডরিন স্বইচ্ছায় সহযোহিতা না করলে, এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এ হত্যাকাে নতুন আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। সোনা চোরাচালানের দ্বন্দ্ব থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন ও ভারতে কারাগারে থাকা দুজনসহ বিদেশে পলাতক মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আলোচিত এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এক সময়ের চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, সহযোগী শিলাস্তি রহমান, মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও একই কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু। এই সাতজনই কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে মিন্টু ছাড়া অন্যরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) পরিদর্শক খান মো. এরফান বলেন, তদন্ত কাজ শেষের দিকে। ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর, দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।
গত বছরের ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন সাবেক এমপি আনার। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন তার মেয়ে ডরিন। এ ছাড়া একই ঘটনায় ভারতেও একটি মামলা হয়। সেখানকার বাগজোলা খাল থেকে হাড় ও সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে ৪ কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করা হয়। পরে এমপি আনারের মেয়ে ডরিনের সঙ্গে ওই হাড় ও মাংসের ডিএনএ রিপোর্ট মিলে যায়।