১০ মাস ধরে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব আয়ে ধস নেমেছে। স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এই স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫১ কোটি টাকা।
স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও আমদানি-রপ্তানিকারকেরা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের আরাকান আর্মি (এএ) নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী বা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি দুটিই বন্ধ। তবে মাঝেমধ্যে আকিয়াব ও ইয়াঙ্গুন থেকে থেমে থেমে পণ্য আমদানি অল্প পরিসরে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এই বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানিকারকেরা।
সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায়ীরা বলেন, ১৯৯৫ সালে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হলেও এখনো আমদানি-রপ্তানিতে ঋণপত্র বা এলসি প্রথা চালু হয়নি। মূলত ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য চলে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট দেখা দেওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এফডিডি সংকটে পড়েন।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের জুলাইয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। এ ছাড়া আগস্টে প্রায় ২৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে সোয়া ৯ কোটি, অক্টোবরে প্রায় ৭ কোটি ও নভেম্বরে সোয়া ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। গত অর্থ-বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল যথাক্রমে প্রায় ৪০ কোটি, ৪৯ কোটি, ৪৮ কোটি, ৬৬ কোটি ও ৪৮ কোটি টাকা।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৩৯৮ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে আমদানি কমেছে প্রায় ৪৭৩ কোটি টাকার। গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আমদানি হয়েছিল ৫৫৬ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় প্রায় ৮৪ কোটি টাকায়।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ব্যবস্থাপক এ এইচ এস আলমগীর বলেন, আগে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ বাংলাদেশে আসত। সেই সংখ্যা কমে এখন সপ্তাহে এক থেকে দুটিতে নেমেছে। একইভাবে আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি কার্গো ট্রলারে মিয়ানমারে পণ্য যেত। সেখানে ১০ মাস ধরে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার মিয়ানমারে যাচ্ছে না।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, আদা, শুঁটকি, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যায় আলু, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তা বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ব্যবসায়ীরা যেমন চাহিদা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করতে পারছেন না, তেমনি ওই দেশ থেকেও পণ্য আসছে না। এ জন্য এই বন্দরের রাজস্ব আদায় অনেক কমে গেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল