বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১২টি আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা ও সম্পদ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাংক, এবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি (এনডিএ) স্বাক্ষর করে এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করবে। কিছু ব্যাংক প্রধান ব্যাংক হিসেবে নেতৃত্ব দেবে এবং একাধিক ব্যাংক মিলে যৌথ উদ্যোগ বা কনসোর্টিয়াম গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ খুঁজে বের করা, স্থগিত করা, জব্দ করা এবং দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ও সম্পদ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিলে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে।
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এটি কোনো একক ব্যাংকের উদ্যোগ নয়, বরং এটি সার্বিক ব্যাংকিং ধারণা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে এরই মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এসব সংস্থা হলো—চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার সংস্থা (স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি), আন্তর্জাতিক দুর্নীতি সমন্বয় কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার), যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস) এবং আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি)। এসব সংস্থা প্রাথমিক অনুসন্ধানে কিছু সফলতা পেয়েছে এবং এখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা যায়।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের কিছু অংশ এরই মধ্যে জব্দও করা হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি) সম্প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা) মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করেছে। লন্ডনের আদালত আরো প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে ও বিদেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ