রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

অকাম্য এই ঝুঁকি

বাংলাদেশকে অবশেষে রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় চিহ্নিত করা হলো। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফটের পক্ষ থেকে লাগানো হলো এই কলঙ্কের তিলক। ম্যাপলক্রফটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সামাজিক অস্থিরতা থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, বেলারুশ, চীন, কাজাখস্তান, সৌদি আরব ও ভিয়েতনাম। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ, বিরোধীদের ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং কর্মপরিবেশের অবনতির কারণে এই দেশগুলোতে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাপলক্রফট ১৯৭ দেশের ব্যবসার ওপর রাজনৈতিক ইস্যুর প্রভাব খুঁজতে ৫২টি সূচক ব্যবহার করে। আর তাতেই উঠে আসে বিশ্বের রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল দেশগুলোর বর্তমান চিত্র। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে নির্বাচন সংক্রান্ত মতপার্থক্য এবং মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে অদৃশ্য যোগসূত্রও গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত অপরাধের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। তবে স্বাধীনতার চার দশক পর বিচার শুরু করার প্রক্রিয়া জটিল হতে বাধ্য এবং তা একটি বাস্তবতা। এ বিচারের পক্ষে যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা দরকার, সরকার সে ক্ষেত্রে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। এ ব্যর্থতা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের অনতিক্রম্য দূরত্বকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে তারা। বিরোধী দলের ওপর সওয়ার হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সমর্থকরা। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আস্থার অভাব না থাকলে এবং দশম সংসদ নির্বাচন কি পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে মতানৈক্য দেখা না দিলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিকভাবে অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে ভাবা হচ্ছে, ঠিক সে সময়ে রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি গড়ে ওঠা দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনও এই তালিকায়- এমন যুক্তিতে এ বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। নিজেদের স্বার্থেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

সর্বশেষ খবর