বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগনামা

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রবিবার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতে প্রাণ দিতে হলো তৌকির ইসলাম নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে। ঢাকার সমাবেশ শেষে চট্টগ্রামে ফেরার সময় ট্রেনের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তৌকিরের সঙ্গে সাতকানিয়ার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বচসা বেধে যায়। এরই একপর্যায়ে সাতকানিয়ার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তৌকিরকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। প্রাণভয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে আহত হন লোহাগাড়া ছাত্রলীগের আরও দুই কর্মী। ছাত্রলীগ সম্পর্কে বলা হতো, এ সংগঠনটির ইতিহাসই বাংলাদেশের ইতিহাস। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে তারা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভূমিকা ইতিহাসে সোনালি অক্ষরেই লেখা থাকবে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ছাত্রলীগ এখন সে ঐতিহ্যের ফসিল মাত্র। আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটা কথা বেশ প্রচলিত। বলা হয় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ যাদের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন তাদের ডোবাতে প্রতিপক্ষের দরকার হয় না। গত পৌনে ছয় বছরে দেশের উন্নয়নে ক্ষমতাসীন সরকারের অর্জন সত্যিকার অর্থেই বিশাল। তবে এ সাফল্য জনমনে ততটা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়নি ছাত্রলীগ, যুবলীগ নামধারীদের কারণে। পৌনে ছয় বছর আগে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারা দেশে আরম্ভ হয় ছাত্রলীগপনা। কোথাও কোথাও যুবলীগপনা। আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটির মুখে কালিমা লাগানোর অপকর্মে লিপ্ত হওয়াকে তারা কর্তব্য বলে বেছে নেয়। আদু ভাই বয়সী ছাত্রলীগ এবং দাদা-নানার বয়সী যুবলীগ নেতা-কর্মীদের দৌরাত্দ্য সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিভীষণের এই বরপুত্ররা নিজেদের লুটপাটের ভাগবাটোয়ারাজনিত বিরোধে কখনো কখনো একে অন্যের রক্তও ঝরায়। লিপ্ত হয় নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে। এমনকি গুপ্তহত্যার মাধ্যমে কেউ কেউ পথের কাঁটা দলীয় প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলন্ত ট্রেন থেকে যারা নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ফেলে হতাহত করতে পারে তারা ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারে কীনা ভাবতে হবে। আমরা আশা করব প্রশাসন তৌকির হত্যাকাণ্ডকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে পাশ কাটিয়ে যাবে না। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর