বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
শিক্ষাঙ্গন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন নিয়ম কেন?

বিধান দাশগুপ্ত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন নিয়ম কেন?

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল। এতদঞ্চলের গণমানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও ত্যাগের বিনিময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ১৯৯১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও এর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল অনেক আগে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের নির্দেশে গঠিত ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ১৯৭৪ সালে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে। তারই আলোকে ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে এতদঞ্চলের মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় এবং কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাজনীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সেশনজটহীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম অর্জন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এরূপ সুনাম-সুখ্যাতি থাকা সত্ত্বেও সরকারের সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল সুদৃষ্টির অভাবে এবং আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্টনীতির কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একাডেমিক বিস্তার সেভাবে লাভ করেনি। খুশির খবর, বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি ও সুষম উন্নয়ননীতি অনুসরণের কারণে এ যাবৎকালের মধ্যে সব থেকে বড় উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে। যার ফলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম ও একাডেমিক বিস্তার দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্নের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভীষ্ট লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে। বর্তমানে সরকারের দূরদৃষ্টি ও উচ্চশিক্ষাকে আরও গতিশীল করার মানসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬৫ ও ৬২ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষা গবেষণায় অধিকতর অবদান রাখার লক্ষ্যে শিক্ষকদের বয়স আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর করা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়স ৬০ বছরে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা, ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ ও হীনমানসিকতার কারণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যে কোনো সময় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। খুবই পরিতাপের বিষয়, অত্যন্ত সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্য দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যেসব সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ গৌরবের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছেন তারা অনেকেই এই বর্ধিত চাকরির বয়সসীমা থেকে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়ার পথে। তাদের অপ্রাপ্তির কষ্ট যেমন রয়েছে তেমনি কর্মকর্তাদের বয়স না বাড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীও যে কোনো সময় ফুঁসে উঠতে পারেন। সুতরাং কর্তৃপক্ষের উচিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করা।

আমি সবিনয়ে এখানে একটি 'আপ্তবাক্য' স্মরণ করতে চাই, 'দ্রুত গড়ে ওঠা সমাজ ব্যবস্থার শাসন ও ব্যবস্থাপনা তার মেজাজ, মর্জি, চাহিদা অনুযায়ী সমতার ভিত্তিতে সহনশীলতার সঙ্গে যদি গড়ে তোলা না যায়, তাহলে সংঘর্ষ অনিবার্য এবং সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য।' তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জের (১৯৩৫) একটি বক্তব্যকে সামান্য বদলে বলা যায়, ‘The steel frame on which the whole structure of our government and of our administration in Bangladesh rest must be recognized and strengthened.’ যুক্তিনির্ভর সমতাকেন্দ্রিক শাসন একটি প্রতিষ্ঠানকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সাহায্য করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে আমরা যারা দাবি আদায়ে রাজপথে সংগ্রাম করেছি, পত্রিকার পাতায় লিখে, বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছি, তাদের সবার হয়ে আমি এই বিমাতানীতির অবসান দাবি করছি।

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক।

 

 

 

সর্বশেষ খবর