শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষের কল্যাণে কাজ করা ইবাদত

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

মানুষের কল্যাণে কাজ করা ইবাদত

আমাদের অনেকেরই ধারণা, ইবাদত মানে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। এ কারণে আমরা ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে ও মসজিদ কেন্দ্রিক আবদ্ধ করে রাখতেই পছন্দ করি। কিন্তু মহান আল্লাহ আমাদের সব কাজকেই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করবেন। যদি তা হয় কোরআন-হাদিসের দেখানো পথ অনুসরণ করে। মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাও অনেক বড় ইবাদত। আলেম, শিক্ষক, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, যে যাই হই না কেন, প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা অপরিহার্য। কারণ আমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে জাতির কল্যাণে। পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, জাতির জন্য যাদের বের করা হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ইমান আনবে।’ সূরা আল ইমরান : ১১০। মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করা অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা যেমন আমাদের দায়িত্ব। তেমনি মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, অভাবীর অভাব মোচনের চেষ্টা করাও আমাদেরই দায়িত্ব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য ইমারাত সাদৃশ্য, যার একাংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙ্গুলগুলো (অন্য হাতের) আঙ্গুলে (এ ফাঁকে) ঢুকালেন (বোখারি-৬০২৬)। তাই শুধু নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করা, অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করা মুমিনের কাজ নয়। মুমিনের কাজ হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে ভালো থাকার চেষ্টা করা। মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা। মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করাও কিন্তু অন্যতম ইবাদত।

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কেয়ামাতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করে (আবু দাউদ-৪৯৪৬)। কখনো কোনো মানুষ সাহায্যের হাত বাড়ালে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমরা প্রার্থী (ভিক্ষুক/সাহায্য প্রার্থী)কে ধমক দিও না’ (সূরা আদ দুহা-১০)। এই আয়াতের মুফাসসিরীনে কেরাম লিখেছেন, কোনো সাহায্য প্রার্থীকে রূঢ় ভাষায় কথা বলা যাবে না। ধমক দেওয়া যাবে না। যদি তাকে সহযোগিতা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। আর যদি না থাকে তবে কোমল ভাষায় অক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে হবে। কোনোভাবে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনো জিনিস চাওয়া হলে তিনি কখনো ‘না’ বলেননি (বোখারি-৬০৩৪)।

                লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

সর্বশেষ খবর