দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ১৭ লাখ। যুব শ্রমশক্তি সোয়া ২ কোটিরও বেশি। চাকরির বাজারে খরা, অন্যদিকে ব্যবসায় অনাগ্রহ। ন্যূনতম পুঁজির অভাবও একটা কারণ। উচ্চশিক্ষিত মেধাবী তরুণরা স্বপ্ন দেখেন বিসিএস অথবা দেশি-বিদেশি এনজিওতে চাকরির। কিন্তু সে সুযোগ সীমিত। ফলে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। অবশ্য এদের একটা অংশ ছদ্ম বেকার। যারা পছন্দের চাকরি জোটাতে পারেননি এবং অন্য যে কোনো কাজেও নিয়োজিত হননি বলেই কর্মহীন। সব মিলে পরিস্থিতি সঙ্গিন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’ যেখানে বিশ্বব্যাপী নন্দিত ও অনুসরিত হচ্ছে- সেখানে তার দেশে ‘শূন্য বেকারত্ব তত্ত্ব’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশে সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগ, বেসরকারি খাতে স্বল্প বেতন ও নিরাপত্তাহীনতা এবং ব্যবসা শুরু করার নানা জটিলতার কারণে, ‘বেকারত্বের ফাঁদে’ বন্দি হয়ে পড়ছেন তরুণরা। এর ওপর জুলাই গণ আন্দোলনের পর অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। দেশে উদ্বেগজনক হারে বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে অভিজ্ঞজনের মতামত- আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী নয়। চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি গড়ে ওঠে না। যুব জনশক্তির পর্যাপ্ত দক্ষতা ও সক্ষমতা না থাকায় অনেক করপোরেট হাউস বাধ্য হয়ে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে। দেশে দক্ষতা উন্নয়নের যেসব সংস্থা রয়েছে, তাদের গবেষণা এবং দিকনির্দেশনারও অভাব প্রকট। কারিগরি খাতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম, এটাও বেকারত্বের অন্যতম কারণ। তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা কম হওয়ার পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও বড় বাধা। তরুণ উদ্যোক্তাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাও জটিল ও সীমিত। সবার ধারণা- চাকরিই যেন একমাত্র ভবিতব্য। এ ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উদ্যোক্তা হয়ে নিজের এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নজির গড়তে হবে সক্ষম জনশক্তিকে। তাদের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে হবে রাষ্ট্রকে। তাহলেই কমবে বেকারত্বের দুঃসহ ভার। জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল হয়ে এগোতে থাকবে ইপ্সিত সমৃদ্ধির পথে।