‘সালাতুল হাজত’ প্রয়োজন পূরণের নামাজ। দুনিয়ার এই ব্যস্ত জীবনে আমাদের কমবেশি বিভিন্ন কিছুর প্রয়োজন হয়। বেকারত্ব জীবন, অসুস্থ শরীর, সন্তানের স্কুলের বেতন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রয়, কর্মসংস্থান, সাংসারিক বিভিন্ন ঝামেলা, অল্প বেতনে সংসারিক খরচ মেটাতে হিমশিম, সন্তানের বিয়ের জন্য ভালো পাত্রপাত্রী খোঁজা, বসতবাড়ি করার জন্য অর্থসহ কত কিছুই এই দুনিয়ার এই জীবনে আমাদের প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজন মেটানোর জন্য কত চেষ্টা করে আবার দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। আবার প্রয়োজন মেটাতে অন্য ব্যক্তির কাছেও শরণাপন্ন হতে হয়। অথচ যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহর কাছে দণ্ডায়মান হলেই মহান আল্লাহতায়ালা সব ধরনের প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সব ক্ষমতার অধিকারী। একমাত্র আল্লাহতায়ালাই বান্দার সব প্রয়োজন মেটাতে পারেন। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর কাছে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে। (সুরা বাকারাহ ১৫৩)
সালাতুল হাজত প্রয়োজন মেটানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ নফল নামাজ। প্রয়োজন মেটানোর জন্য আল্লাহর উদ্দেশে নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলা হয়। এই নামাজ স্বয়ং আল্লাহর রসুল তাঁর সাহাবিদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পড়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। সালাতুল হাজাত নামাজের নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যে কোনো সময়ে এই নামাজ আদায় করা সম্ভব। নফল নামাজের মতোই উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে ধৈর্যসহকারে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। তবে চার রাকাতও আদায় করা যেতে পারে। নামাজ শেষে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ করবে। যা প্রয়োজন তা উল্লেখ করে নিজের মনের সব বিষয় মহান আল্লাহর কাছে পেশ করবে। মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করে দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা আল-আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর কাছে অথবা তাঁর কোনো মাখলুকের কাছে কারও কোনো প্রয়োজন থাকলে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে। এরপর এই দোয়া পাঠ করে। দোয়াটি হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর-হামার রা-হিমিন। অর্থ হলো, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু, সব দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। তিনি মহান আরশের প্রভু। সব প্রশংসা আল্লাহর, তিনি সারা জাহানের রব। আপনার কাছেই আমি যাঞ্ছা করি- আপনার রহমত আকর্ষণকারী সব পুণ্যকর্মের অসিলায়, আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সব কাজের বরকত, সব নেক আমলে সাফল্য লাভ এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার কোনো গুনাহ যেন মাফ ছাড়া না থাকে। কোনো সমস্যা যেন সমাধান ছাড়া না রয়ে যায়। আর আমার এমন প্রয়োজন যাতে আপনার সন্তুষ্টি রয়েছে, তা যেন অপূরণ না থাকে। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ শরীফ)
প্রিয় পাঠক, প্রয়োজন দেখা দিলে দুশ্চিন্তা ও অন্যের কাছে শরণাপন্ন নয়। ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে প্রয়োজন মেটানোর জন্য উত্তম ইবাদত সালাতুল হাজত আদায় করুন। রাতের শেষাংশে ঘুম থেকে উঠে জিকির, তাসবিহ, দরুদ পাঠে সময় অতিবাহিত করে মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করুন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় নিচে উল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করতেন। ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র। অর্থ, হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের দুনিয়াতে মঙ্গল দিন এবং আখেরাতেও মঙ্গল দিন। জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (বুখারি শরীফ)
লেখক : ইসলামিক গবেষক