বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের কল্পিত অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তা উপমহাদেশের যে কোনো দেশের জন্য আদর্শস্থানীয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কালো হাত থাবা বিস্তার করেছিল, যা দিনে আলোর মতো সত্য। তবে এ অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল গোটা জাতি। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশে গত এক দশকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুর সংখ্যা শতকরা ১২ শতাংশ হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী সরকারি চাকরিতে তার সংখ্যা ২৫ শতাংশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও সংখ্যালঘুদের চাকরি দেওয়া হয়েছে ব্যাপকভাবে। দেশের তিন পার্বত্য জেলার উপজাতি তথা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংখ্যানুপাতের চেয়ে দ্বিগুণ হারে চাকরি পাওয়ার ঘটনা বহু ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরুদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চারও করেছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ধারে-কাছের সব দেশে কী অবস্থা বিরাজ করছে সেদিকে দৃষ্টি দিলে যে কারও কাছেই স্পষ্ট হবে, বর্ণবাদী হিসেবে নিজ দেশে নিন্দিত এবং চরম সাম্প্রদায়িকতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা নামের এক মতলববাজ নারী যে কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন তা হাস্যকরই শুধু নয়, সংখ্যালঘুদেরও স্বার্থবিরোধী। কারণ, গত এক দশকে সংখ্যালঘুরা কোনোভাবেই উপেক্ষিত নয় বরং সর্বক্ষেত্রে সুবিধাপ্রাপ্ত অংশে পরিণত হয়েছে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিজেদের ন্যায়ভিত্তিক হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হলে তা সংখ্যালঘুদের জন্যই বরং সুবিধা হারানোর বিপদ সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি, প্রিয়া সাহার হঠকারী আচরণের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত।