রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

খাসিয়া

খাসিয়া বা খাসি বাংলাদেশে বসবাসরত একটি মাতৃতান্ত্রিক নৃ-গোষ্ঠী। এরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। এদের গাত্রবর্ণ হরিদ্রাভ, নাক-মুখ চ্যাপ্টা, চোয়াল উঁচু, চোখ কালো ও ছোট টানা এবং খর্বকায়। খাসিয়ারা ৫ শতাধিক বছর আগে আসাম থেকে বাংলাদেশে আসে। তারা আসামে এসেছিল সম্ভবত তিব্বত থেকে। এককালে এ উপজাতিরা ছিল যাযাবর। তাদের সে স্বভাব সাম্প্রতিককালেও লক্ষণীয়। তাদের প্রধান আবাসস্থল উত্তর-পূর্ব ভারত। তবে পার্বত্য খাসিয়াদের বাসভূমি পশ্চিমে গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে এরা নেমে এসেছিল চেরাপুঞ্জি ও শিলং খাসিয়া অঞ্চলে। পাহাড়-টিলা, ঝোপজঙ্গল এদের পছন্দনীয় পরিবেশ। কাঠ বা বাঁশের মঞ্চের ওপর বারান্দাসহ এরা কুঁড়েঘর বানায়। বারান্দাই বৈঠকঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অধুনা বাঙালিদের মতো ঘরও নির্মাণ করছে। বসতঘরের সঙ্গেই রন্ধনশালা ও কাছাকাছি থাকে পালিত শূকরের খোঁয়াড়। খাসিয়ারা গ্রামকে পুঞ্জি বলে। অন্য সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন, স্বীয় সীমানায় ও সাংস্কৃতিক বলয়ে গ্রামগুলো পুঞ্জীভূত। জীবিকার তাগিদে দলেবলে স্থান ত্যাগ করে এরা নতুন পুঞ্জি রচনা করে। বাংলাদেশে তাদের আদি নিবাস বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জ জেলায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে যা সমুদ্র সমতল থেকে ৯/১০ মিটার ঊর্ধ্বে অবস্থিত। এককালে এখানে কয়েকটি পরগনা দখল করে কোনো খাসিয়া সর্দার একটি রাজ্যও গঠন করেছিলেন। তবে পরে তিনি বিতাড়িত হন। বর্তমানে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও সদর থানায় খাসিয়ারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খাসিয়া অঞ্চলে সিন্টেং, গারো ও লালং উপজাতিরও বসতি আছে। তবে তারা সংখ্যালঘু, খাসিয়াদের চোখে হেয়, যদিও ওরা (গারো ছাড়া) খাসিয়া বংশো™ূ¢ত। খোদ খাসিয়াদের মধ্যেও একাধিক গোত্র আছে, যেমন খোংতা, পলং, সুরং ইত্যাদি। হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার সীমান্তে পাঁচটি, মৌলভীবাজারে ৬১টি এবং বর্তমান সিলেট জেলায় সাতটি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এদের অধিকাংশই সীমান্ত অঞ্চলে বাস করে। গায়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর এবং জোয়াই ও জৈন্তাপুরের মাঝখানে অনেক খাসিয়া বসতি রয়েছে। কুলাউড়ার চা বাগানে বহু খাসিয়া চাকরি করে। বাংলাদেশে খাসিয়া জনসংখ্যার সঠিক হিসাব নেই। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ১২,৩০০ জন খাসিয়া আছে। কিন্তু ‘বাংলাদেশ খাসিয়া সমিতি’ তাদের সংখ্যা ৩০ হাজার বলে দাবি করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর