গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাকে রাজনীতিবিদসহ পরিচিত ও অপরিচিত অনেকে দেখতে এসেছেন এবং ফোনে চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে দূরদূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী। কমিউনিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিজিটরের বাড়তি চাপ ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডা. আবদুল মালেকের নেতৃত্বে চিকিৎসকরা, নার্স, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মানবিক গুণাবলি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সুহৃদ দর্শনার্থীদের অনেকেই বিদেশে অথবা দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। মগবাজার ওয়্যারলেস বস্তির কাছে, রেললাইনের ধারে, গলির মুখে তীব্র ভিড় ও জটলা ঠেলে হাসপাতালে প্রবেশ করা ভিজিটরদের মধ্যে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা ছিল, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য কোথাও যাচ্ছি না কেন। কৌতূহলবশত অনেকেই জানতে চান- ঢাকার নামকরা সব হাসপাতাল থাকতে আমি কেন কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক। প্রতিষ্ঠাতা ডা. কাজী কামরুজ্জামান সত্যিকার অর্থেই একজন মানবদরদি খাঁটি মনের মানুষ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা।
কমিউনিটি হাসপাতালে দেশের অন্য যে কোনো হাসপাতালের তুলনায় চিকিৎসা ব্যয় সাশ্রয়ী। যে কোনো টেস্টে স্বল্প ব্যয়, ক্যানটিনে ছাত্রছাত্রী ও স্টাফদের ৪০ টাকা ও রোগীর দর্শনার্থীদের ৭০ টাকায় মানসম্মত খাবার দেওয়া হয়। বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাওয়ায় প্রতিদিন ঢাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর লোক এই হাসপাতালে আসে। কমিউনিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৩৫টি কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টারও পরিচালনা করছে।
এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা যে বাণিজ্য নয়, এই নীতিটি অনুসরণ করে কমিউনিটি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে এফআরসিএস চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা ফেলে কাজী কামরুজ্জামান ও তাঁর অন্য বন্ধুরা ইংল্যান্ড থেকে ভারতে গিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিন বন্ধু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. মাহমুদুর রহমান ও ডা. কাজী কামরুজ্জামান ভারতে গিয়ে স্ব-উদ্যোগে জেনারেল জিয়া, জেনারেল এম এ জি ওসমানী ও জেনারেল খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তী সময়ে তাঁদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে প্রাথমিকভাবে ভারতের ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলেন। যুদ্ধকালীন তিন বন্ধু রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনা করেন। যুদ্ধবিজয় শেষে তিন বন্ধু মিলে ঢাকার অদূরে প্রথম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। গরিব দেশে গরিব মানুষের জন্য স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা সহজ ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিন বন্ধু জীবনপণ পরিশ্রম করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। ঘটনাক্রমে এই তিনজনের সঙ্গেই আমার গভীর সম্পর্ক। আমি নিজেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে চলা একজন মানুষ। আমি সাধারণ মানুষের কাতারে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করার সুবাদে ক্ষমতাবান অনেকের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। চাইলেই তাঁরা সহযোগিতা করবেন। দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রস্থল আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হিসেবে সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতি যথাসাধ্য সম্মান ও অনুগত থাকার চেষ্টা করি। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করায় শ্রমিকশ্রেণি তথা গরিব মানুষের মতামতও বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হয়।
অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসার খোঁজখরব নিতে হাসপাতালে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, আবদুল কাইয়ুমসহ অনেকে, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, তানভীর রবিনসহ অনেকে, ড্যাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ডা. রফিক, মহাসচিব ডা. শাকিল, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. শামীম, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লুৎফর রহমান, ডা. মনোয়ারুল কবির বিটুসহ পিজি ও ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা, পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, কৃষিবিদ তুহিন, মাসুদ খন্দকার, সেলিম রেজা হাবিব, আনোয়ারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার সাইফুরসহ অনেকে। পাবনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইকবাল হোসেনসহ অনেকে, পাবনা জেলা জাসদের কবির হোসেনসহ অন্যান্য দলের নেতারা, প্রবীণ বামপন্থি নেতা কমরেড টিপু বিশ্বাস, পাবনা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি জহুরুল ইসলামসহ সাংবাদিক নেতারা। পাবনা চেম্বার, পাবনা মোটর মালিক, ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, পাবনার পাইকারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদ হোসেন মানিক, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত, সহসাংগাঠনিক আমিরুল ইসলাম আলীম, ওবাইদুর রহমান চন্দন, রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রফেসর বিশ্বনাথ সরকার, শফিকুল ইসলাম মিলনসহ অনেকে। সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ফারজানা পুতুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান, বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদিন, সৈয়দ আবদাল আহমদ, সাইয়েদ আবদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, কবি আবু সালেহ, নাজমুল হক নান্নুর নেতৃত্বে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতারা, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, জাসাসের নেতৃত্বে শিল্পী-কলাকুশলীরা। শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দ তৈয়ব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার হাসপাতালে দেখতে আসেন। যোগাযোগ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খোদাবক্স চৌধুরীসহ উপদেষ্টারা খোঁজ নেন। সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে জেনারেল নজরুল ইসলাম, জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, সরকারের সচিব ও বিভিন্ন পর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নেতা থেকে সাধারণ শ্রমিকরা হাসপাতালে আসেন।
তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজের ছাত্ররাও দেখতে আসেন। ফোন করে চিকিৎসার খোঁজখবর রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের প্রধান প্রফেসর এ এফ এম সিদ্দিকী নিয়মিত খোঁজখবর নেন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ মানুষ হাসপাতালে আসেন ও খোঁজখবর রাখেন। সুহৃদ অনেকের পরামর্শ ছিল দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা দেশের ভিতরে থেকেও উন্নতমানের ব্যয়বহুল কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যেত। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতি অনুগত থাকা প্রয়োজন। এত ব্যস্ততার মধ্যে আপনারা যাঁরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা জ্ঞাপন করছি। আপনাদের দোয়া আমার দ্রুত আরোগ্য লাভ ও চলার পথের পাথেয়।
লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী