শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সুস্থতা আল্লাহর নিয়ামত

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

শারীরিক শক্তি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। তিনি বলেন, হালাল ও পরিমিত ভক্ষণ সুস্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম উপায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম উপায় হলো বিশ্রাম। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে এবং বিশ্রাম না নিলে মানবদেহ স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্য আসার আগেই বার্ধক্যের কোলে ঢলে পড়তে হয় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়। কারণ মানবদেহ একটি ইঞ্জিন বা যন্ত্রের মতো। একটানা কোনো ইঞ্জিন চলতে থাকলে সেটা যেমন খুব দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়ে তেমন মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না হলেও তা দ্রুত অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। এক সাহাবি দিনভর রোজা রাখতেন আর রাতভর নামাজ পড়তেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে। স্বাস্থ্য রক্ষা করা শরিয়তের তাগিদ। এটাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। শরয়ি আইন ও বিধানাবলির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। কোরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরিয়ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন গুরুত্ব দিয়েছে তেমন তা কার্যকরের ফলপ্রসূ উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম করা, পরিমিত আহার, সময়ানুগ খাবার গ্রহণ ইত্যাদি। কাজেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া ইমান ও বিশ্বাসের দাবি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরপরই ইসলাম রোগ প্রতিরোধের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে- চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম। এজন্য আমরা দেখতে পাই, যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের রোগ হয় ইসলাম আগেই সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। হাদিসের প্রায় সব কিতাবেই একটি অধ্যায় আছে ‘কিতাবুত তিব’ বা চিকিৎসা অধ্যায়। সেগুলোয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আলোচিত হয়েছে। মানুষের রোগ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো অলসতা ও কর্মবিমুখতা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অলসতা থেকে পানাহ চাই।’ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসজনিত প্রদাহ এসব রোগের উৎস মূলত আলস্য ও কর্মবিমুখতা। তা ছাড়া যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতিভোজনও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পেটকে সব রোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে হাদিসে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে- যখন ক্ষুধা পাবে কেবল তখনই খাবে। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘খাও, পান কর কিন্তু অতিরিক্ত কোরো না।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৩১। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা উদর পূর্তি করে ভোজন কোরো না, কেননা তাতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহর আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। এ কথা সর্বস্বীকৃত যে, দেহের ক্ষয় পূরণ ও তার উন্নতির জন্যই আমরা আহার করি। তবে এ আহার করারও একটি স্বাস্থ্যসম্মত নীতি রয়েছে। যে নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে সে আহারই শরীরের ক্ষয় পূরণের পরিবর্তে তাতে বরং ঘাটতি এনে দেবে। শরীরে জন্ম নেবে নানা রোগের উপকরণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সুন্নতই বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর