শিরোনাম
রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আবার প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র নয় তো?

আবেদ খান

আবার প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র নয় তো?

সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ অনুষ্ঠান টিভি পর্দায় দেখছিলাম। শরীরে কুলোয়নি বলে আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পরও ঘরে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছি। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী ও ভগিনী শেখ রেহানার উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে করতে একসময় হোঁচট খেলাম। আমি নিজেও জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ঘরে বসেই জাতীয় সংগীতে গলা মিলিয়েছি, উচ্চারণ করেছি শপথবাক্য জননেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, ‘মুজিববর্ষ’-এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘মুজিবর্ষ’। যে বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে তো আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার স্মৃতি যদি আমাকে প্রতারণা না করে তাহলে বলতে পারি, সভাপতি ও ভাষাসৈনিক জাতীয় অধ্যাপক সদ্যপ্রয়াত রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকটিতে দীর্ঘ আলোচনার পর ‘মুজিববর্ষ’ নামটাই গৃহীত হয়েছিল। আজ বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় দিনে এই মহতী অনুষ্ঠানের শপথবাক্য যেখানে পাঠ করা হয় সেখানে কেন ‘মুজিববর্ষ’-এর বদলে ‘মুজিবর্ষ’ লিখিত হলো তা আমার বোধগম্য নয়। এটি কি কেবলই ভুল? নাকি এও কোনো সচেতন পরিকল্পনারই অংশ?

সে পরিকল্পনা কি এটাই যে, বাংলাদেশ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যখন পৃথিবীর বুকে বুক চিতিয়ে তার সক্ষমতার জানান দিচ্ছে, বিশ্বের সব রাষ্ট্রনায়কের প্রশংসা ও সমীহ আদায় করে নিচ্ছে, তখন কোনো না কোনোভাবে তার পথ রুদ্ধ করতে না পারলেও নাজেহাল করতেই হবে? তাকে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা এ অশুভ শক্তির আর অবশিষ্ট যা আছে তাই-ই ব্যবহার করছে। আর তাই দেশের এ মহতী লগ্নে এমন কার্য কি সে হিংসারই প্রতিফলন নয়? বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি ও বিশ্বের মানুষের সামনে যতটা পারা যায় বিব্রত করা- সে অপচেষ্টাই কি নয়? কারণ আমরা তো জানি, এ অপশক্তি আজও বাঙালির স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। আর তাই ষড়যন্ত্রের জাল যতটা বিস্তৃত করা যায় আজও করে চলেছে। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা আজ বিজয় দিবসে দৃপ্তকণ্ঠে শপথবাক্য পাঠ করেছেন- ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’ যে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি এ শপথবাক্য পাঠ করেছেন, সে টেবিলেরই ঠিক সম্মুখপানে ছিল বৃত্তাকার একটি স্মারক। তার মধ্যেই ওপরের দিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে আর ঠিক মাঝখানটাতেই লেখা ‘সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিবর্ষ’ কথাটি। অর্থাৎ যেখানে বানান ভুলের কাজটি করলে খুব সহজেই সবার দৃষ্টিগোচর হয়, ঠিক হিসাব করে, সুকৌশলে সে জায়গাটিই তারা ব্যবহার করেছে!

একে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করি। সম্প্রতি আমরা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ধৃষ্টতা দেখেছি মিরপুর স্টেডিয়ামে। সেখানেও আমরা লক্ষ্য করেছি বিজয়ের মাস, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সময়টাকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বেছে নিয়েছেন পাকিস্তান টিমকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আমরা দেখলাম, ভারত-পাকিস্তান হকি খেলার আয়োজন করা হয়েছে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে- সেটাও এ বিজয়ের মাসেই! এসব ঘটনা পর্যালোচনা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে দেশের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বাধীনতাবিরোধীরা খুবই সক্রিয় ও সোচ্চার। তারা সব সময় ওত পেতেই আছে, সুযোগ তৈরি করছে এবং কখনো কখনো সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে; আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের বিব্রত ও ক্ষতিসাধন করে চলেছে।

স্মৃতিতে এও রয়েছে- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় মামুনুল হকদের দেশব্যাপী হিংস্রতা এবং অমুসলিম মানুষের ওপর হামলা ও নির্মম অত্যাচার আর তান্ডবলীলার কথা। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সেখানেও মুজিববর্ষ উদ্যাপনের সময়টাকেই তারা বেছে নিয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল। তাহলে কি তারা বড় কোনো ষড়যন্ত্র করে সফল না হতে পেরে এসব পন্থারই আশ্রয় নিচ্ছে? অর্থাৎ যে কোনোভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাই যে তাদের প্রধান লক্ষ্য এমনটি ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কেউ কেউ একে অযোগ্য লোকদের হাতে এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ক্রোধ ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। কিন্তু আমি এসব কর্মকান্ডকে এত সহজ সমীকরণে বিচার করতে চাই না। আমি মনে করি বিশ্বস্ততার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে আছে পুরনো শকুনরা। তাদের খুঁজে বের করতে আলট্রাস্ক্যান পদ্ধতি কিছু থাকলে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে তা ব্যবহার করতে হবে।

                লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক জাগরণ।

সর্বশেষ খবর