ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জাতিগতভাবে, বিভিন্ন সমস্যা, বিড়ম্বনা, জটিলতা এবং ট্যাগিং নামের ট্রাবল-এ মানব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উন্নয়ন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের শর্ত হিসেবে শতকরা ৯৫ ভাগ সংস্থার বাধ্যতামূলক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। যেমন ১. লাভের জন্য নয় : প্রফিট নট ফর পারসন, মানে বেতনভাতাদি ছাড়া পকেটে পয়সা নেওয়ার আইনগত, ধর্মীয়, সামাজিকভাবে অর্থগ্রহণ করা বৈধ নয়। ২. অরাজনৈতিক : প্রতিষ্ঠান প্রণীত অনুমোদিত গঠনতন্ত্র মোতাবেক কোনো ধরনের পার্টিজান পলিটিক্স অর্থাৎ দলভুক্ত হয়ে রাজনীতি করা যাবে না, অথচ এই জাতীয় জনকল্যাণ উন্নয়নমূলক সংস্থার এ-টু-জেড সব কার্যক্রমই জাতীয় রাজনীতি সহায়ক। রাজনীতির উদ্দেশ্য মানবসেবা ও মানুষের কল্যাণে দেশকে সমৃদ্ধকরণ। রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম, রাজনীতিবিদদের সম্মান আকাশচুম্বী, সম্পদ তলানিতে থাকবে। রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল যে দেশের যত ভালো, সে দেশের উন্নয়ন ও সম্মান বিশ্বের তত ওপরিস্তরে। টিএমএসএসতুল্য বেসরকারি সংস্থাগুলো সব রাজনীতিবিদ এবং সব রাজনৈতিক দলের সাম্যতাভিত্তিক উন্নয়ন এলিমেন্ট হিসেবে নিয়ামক। রাজনীতিবিদরা মানবসেবা, জাতির সেবা, জাতির সমৃদ্ধি না করে ব্যক্তিসম্মান টেকসহিতা বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিসমৃদ্ধ, ব্যক্তিসম্পদ অর্জন করলে তখনই বিপর্যয় ঘটে। ৩. ধর্মনিরপেক্ষতা : সংস্থা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাক আর না থাক বিগত সরকারগুলো গঠনতন্ত্র অনুমোদন, নবায়ন পেতে হলে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়টি লেখার বিকল্প ছিল না। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম। ইসলাম ধর্ম মোতাবেক রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করার কোনো সুযোগ, পথ-পন্থা নেই। তেমনি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানেরও একই দশা। তাই ইসলাম ধর্ম মতে, সেক্যুলারিজম এবং ধার্মিকতাকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু আয়রনি হচ্ছে গঠনতন্ত্রে সেক্যুলারিজম লিখতেই হবে। টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ সেক্যুলারিজম বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সে স্থলে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, স্ব-স্ব ধর্মের প্রতি পূর্ণ আস্থা এ কথা প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে বারবার বিধির বাম হয়। এ ছাড়াও টিএমএসএসের ক্ষেত্রে ৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক : নিম্ন থেকে ঊর্ধ্বগামী সিদ্ধান্ত, জবাবদিহিমূলক অনুশাসন। এই ৪ নম্বর মৌলিক ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, এ নিয়ে কারোরই আগ্রহ নেই। জবাবদিহির দ্বারা সুশাসন, শুদ্ধাচার, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা হলে ট্যাগিং অস্ত্রধারীদের সামান্য হলেও ট্রাবল হয়। তাই সংস্থার সুশাসন, শুদ্ধাচার নিয়ে বিগত ৪৫ বছর সংস্থার জীবনে কোনো সুশীল, সাংবাদিক কারও কাছে মুখোমুখি হতে হয়নি, জবাব দিতে হয়নি। ৪ নম্বর মুখ্য মূলনীতি ব্যত্যয় হলে দাবিকারী চাঁদাবাজ ট্যাগিংদাতাদের ক্ষেত্র উর্বর হয়।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পার্টিজানভুক্ত হলে স্বীয় পার্টি যদি দেশশাসনের ক্ষমতায় থাকে স্বীয় ব্যক্তি, স্বীয় সংস্থা/প্রতিষ্ঠান নানাভাবে সুবিধা পায়। যথা : (ক) সরকারি অনুদান। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের রেজিম পূর্বকালে টিএমএসএস যা সরকারি অনুদান পেয়েছে, প্রকল্প পেয়েছে, দেশের জাতীয় বাজেট অভাবনীয়ভাবে বাড়লেও টিএমএসএসের অনুদান অভাবনীয়ভাবে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে, প্রকল্প পাওয়া যায়নি। (খ) ব্যাংক।
শিডিউল ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে জনগণের টাকা মুছে নিয়ে ব্যক্তি-গোষ্ঠী বৈভবে সুযোগ ভোগ করা। (গ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। নীতিগতভাবে লাভের জন্য না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় দ্বারা ট্রাস্টি নামে ব্যক্তি-পরিবার-গোষ্ঠী ভোগবিলাস করে, বিদেশ ভ্রমণ করে, সেই ভাউচার অডিটেও গ্রহণ হয়। (ঘ) বিমা। ব্যাংকতুল্য বিমার দ্বারা ক্লায়েন্টদের প্রিমিয়াম আত্মসাৎ করলেও বিমা দাবি (ক্লেম পেমেন্ট) যুগের পর যুগ অধরাই থেকে যায়। (ঙ) টিভি চ্যানেল। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়, ট্যাগিং অস্ত্র ব্যবহার করার অবারিত সুযোগ পাওয়া যায়। সৎ, সচ্ছল সম্পদধারীদেরও তটস্থ রাখা যায়। (চ) এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, (ছ) জাতীয় পুরস্কার ইত্যাদি অস্ত্র পেতে গেলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনুকম্পা লাগে। টিএমএসএস এই অনুকম্পাগুলোর কি একটিও পেয়েছে? কিছুই পায়নি। কোনো ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলভুক্ত হতে গেলে-পার্টির সাধারণ সদস্যপদ, পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, পার্টির অনুকূলে অর্থায়ন, পার্টি অফিসে পদার্পণ, নির্বাচনকালে পার্টিভুক্ত হয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ, ইত্যাদি কোনো কাজে কখনোই টিএমএসএস অংশগ্রহণ না করে সংস্থার সাংবিধানিক মুখ্য মূলনীতি প্রতিপালন করে আসছে।
টিএমএসএস এবং এ জাতীয় অরাজনৈতিক সংস্থা কর্তৃক সরকারকে শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ছাড়া সংগ্রাম ও সহিংস কিছু করার ম্যান্ডেট নিই, বৈধ নয়। এটা সংস্থাগুলোর চেতনা, পলিসি বলা যেতে পারে। সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের দুর্গম জনপদের উন্নয়নকাজে জনসম্পৃক্ততা করে সরকারের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে নিরীহ শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখা ছাড়া রাজনৈতিক অভিলাসের পথ-পন্থা নেই। কিন্তু মুশকিল হলো, রাজনীতিকে যারা রোজগারের অবলম্বন মনে করে, তারা টিএমএসএস জাতীয় সংস্থাগুলোকে প্রতিপক্ষ গণ্য করে মূলত উন্নয়নই ব্যাহত করেন। দুঃখের বিষয়, যে পার্টি যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে সেই পার্টি টিএমএসএসকে ভালো বলে, ট্যাগ দেয় না। আবার ওই পার্টিই যখন ক্ষমতায় যায় তখন ট্যাগ দেওয়ার শেষ নেই। জনস্বার্থে ওই ক্ষমতাসীন পার্টির কাছে কোনো কিছু চাইতে গেলে ট্যাগ দিয়ে ফেরত দেয়।
শুধু দেশীয় রাজনীতিবিদরা যে ট্যাগ দেয় তা নয়। বৈদেশিক অনুদানহীনজনিত কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ লাইসেন্স টিএমএসএসের নিষ্প্রয়োজন ঘোষণা হওয়ার উপক্রম হলে অনেক চেষ্টা করে অতি স্বল্পমাত্রায় টুকিটাকি অনুদান নিয়ে লাইসেন্স টিকিয়ে রাখা আছে। পতিত সরকারের রেজিম শেষের দিকে ২০২৪ সালে কোরিয়ান ডোনার অভাবনীয় পরিমাণ ডোনেশন দেওয়ার কমিটমেন্ট লেটার দিলে যথাযথ পদ্ধতিগতভাবে সরকারি ছাড়পত্র পেতে পেতে সরকারের রেজিম শেষ, সরকারের পলায়ন, ডোনার নিষ্ক্রিয়। জানা গেছে, তারাও ট্যাগিং দিচ্ছে টিএমএসএসের সহযোগিতায় খাদ্যি-খানা, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পুস্তকসহ লেখা-লেখনীতে তারা শুধু অসন্তুষ্টই নয় সংক্ষুব্ধ, ফান্ড ছাড় করছে না। প্রবন্ধের শিরোনামভুক্ত সমস্যায় টিএমএসএস সব সময়, বারবার আক্রান্ত হলেও সব শাসক, সুশীল, সচেতন মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে আহ্বান করি আমাদের অনুসন্ধান করুন, বাস্তবতা অনুধাবন করুন, ট্যাগিং ট্রাবল দিয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। আর এই ক্ষতির কবলে যারা পড়বে তারা নেহাত সবার কাছে থেকে পাওনাদার, হকদার, দাবিদার। ফরজে আইনের হক্কুল ইবাদত কাজা না করে সাদা সরল মনে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে টিএমএসএস অনুকূলে সাহায্য ও সহযোগিতা করুন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, টিএমএসএস
ইমেইল : [email protected]