ইয়া নাবী সালাম আলাইকা, ইয়া রসুল সালাম আলাইকা, ইয়া হাবিব সালাম আলাইকা, সালাওয়া তুল্লাহ আলাইকা। আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অপার নেয়ামত, রাহমাতুল্লিল আলামিন আমাদের প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময়, মানবতার মুক্তির দূতের এ পৃথিবীতে শুভাগমনের আনন্দকেই ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ বলা হয়। যাঁর নুরের আলোয় সারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল। তাঁর ওপরই আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন আসমানি গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পৃথিবীতে এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের আলো হয়ে। হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। নবীদের মাতারা এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতা তাঁকে প্রসবের সময় এমন এক নুর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল। (তাবারানি, হাদিস নম্বর-১৫০৩৩, সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস নম্বর-৬৪০৪)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের উৎসব আল কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন- তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সেই সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ (সুরা ইউনুস-৫৮)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, এখানে ফজল ও রহমত দ্বারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমন উদ্দেশ্য। আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সারা বিশ্বের মহাবিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাহলে আমরা বুঝলাম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ আগমনই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবীজি আমি তো আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালন করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) বর্ণিত- তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবার রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম-১১৬২)। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ ঈদ কীসের ঈদ? উত্তর, এ ঈদ প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমন তথা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঈদ। প্রশ্ন হতে পারে, হাদিসে কি মিলাদুন্নবীর কথা আছে? জি, আমরা দেখতে পাই জামে তিরমিজি দ্বিতীয় খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে একটি অধ্যায়ই রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর দালায়েলুন নবুয়ত প্রথম খণ্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় ফি মিলাদে রসুল্লল্লাহ (সা.) শীর্ষক একটি অধ্যায়ও রয়েছে।
নবীজির সাহাবিরাও মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করেছেন। হজরত আবু দারদা (রা.) বর্ণিত- একদা তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজরত আমির আনসারি (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিলাদাত উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের ঘটনাগুলো শোনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিনে তাশরিফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে খুশি হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন। (দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-জালাল উদ্দিন সুয়ূতি রহ.)। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হচ্ছে। আসুন, নবীজি (সা.)-এর শুভাগমনের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা তাঁর জীবনকর্ম চর্চা করি। আমরা নফল রোজা রাখি। দান-সদকা করি, অসহায় গরিব দুঃখীদের পাশে দাঁড়াই। নিজের আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবাইকে নবীজি (সা.)এর উত্তম চরিত্রের কথা, মানবসেবার কথা, মানবতার কথা নবীপ্রেমের কথাগুলো শোনাই। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা নবীজি (সা.)-এর শুভাগমনের আনন্দ শোভাযাত্রা, কোরআন তিলাওয়াত, নাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ মাহফিল উদ্যাপন করি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ছড়িয়ে দিই আমাদের কাজকর্ম-আচরণে। পরিবারে, সমাজের সর্বক্ষেত্রে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিলায় সারা বিশ্বের মুমিন মুসলিম নরনারীদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, সিদ্দিকে আকবর (রা.) জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা