আমাদের ইতিহাসের সব মহান অর্জন এসেছে জাতীয় ঐক্যের ফসল হিসেবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থানে গণমানুষের ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্য নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। গত বছরের মহান জুলাই গণ অভ্যুত্থান সফল করার কঠিন সংগ্রামে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্য নতুন ইতিহাস রচনায় ভূমিকা রেখেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিবিদদের ঐক্য কতটা অটুট আছে, তা বড় মাপে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব নিজেই এমন প্রশ্ন তুলেছেন এবং ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পর দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তোলার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, চারদিকে একটা অনৈক্যের সুর। আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ম্যাগাজিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’র আয়োজনে এসএসসি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য তাৎপর্যের দাবিদার। রাজনীতিবিদদের ঐক্য শিথিল হয়ে পড়ায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তেমন সংশয়ও দানা বেঁধে উঠছে। পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে রাজনীতিকদের ব্যর্থতার কারণে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল সে ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতভেদের কারণে। দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করার ভ্রান্তিতে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্য শিথিল হওয়ার কারণে পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠছে। ঘটছে অন্তর্ঘাতের ঘটনা। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ যাতে গণতন্ত্রের পথে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক শক্তিকে সুবুদ্ধি ও সুবিবেচকের পরিচয় দিতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে সব ক্ষেত্রে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য বজায় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।