আগুন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুরা ইয়াছিনের ৮০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত কর।’ আগুন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্য অন্যতম সৃষ্টি। আল্লাহর কোনো সৃষ্টিই অযথা নয়। সবকিছুই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষের উপকারের জন্যই করেছেন। আগুন মানুষের উপকার যেমন করে ঠিক তেমনি ক্ষতিও করতে পারে। সহিহ বুখারি শরিফের বর্ণনায় আগুনকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চরম শত্রু বলেছিলেন। অসচেতনতা ও অসাবধানতার জন্য আগুনে দগ্ধ হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু ও ক্ষতি হয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যাওয়াটা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। এজন্য আগুন থেকে রক্ষা পেতে খুব প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পনা। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, কেমিক্যাল, মেশিনারির দিকে সর্বদা সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। বের হওয়া বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্যাসের চুলা, ইলেকট্রনিকের যন্ত্র পরীক্ষা করে নেওয়াটা জরুরি। সর্বাবস্থায় আগুনের দুর্ঘটনা হওয়ার আগে প্রতিরোধ করা ইসলামের শিক্ষা। এ ব্যাপারে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হলেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও। (সহিহ বুখারি শরিফ)
আমরা জানি, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। আগুনের দুর্ঘটনায় হইহুল্লোড় না করে নিরাপদ স্থানে এসে আগুন নেভানোর জন্য নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং যারা কাজ করছে তাদের সহায়তা করা নৈতিক দায়িত্ব। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরলে পানি ব্যবহার না করে শুকনো বালি ব্যবহার করুন। এরই সঙ্গে অতিরিক্ত ‘তাকবির’ (আল্লাহু আকবার) বলা উত্তম। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনের আয়াত ‘কুল ইয়া না-রু কু-নি বারদান ওয়া সালামান আলা ইবরাহিম’ পাঠ করা যেতে পারে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) অগ্নিদগ্ধ হওয়াসহ সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওপর থেকে পড়ে যাওয়া, ঘরচাপা পড়া, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং আগুনে দগ্ধভূত হওয়া থেকে। আর আমি মৃত্যুকালে শয়তানের ছোঁ মারা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, আর আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার পথে পৃষ্ঠ প্রদর্শন অবস্থায় মারা যাওয়া থেকে এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সাপ-বিচ্ছুর দংশনে মৃত্যুবরণ করা থেকে। (সুনানে নাসায়ি শরিফ)
শত্রুতার জেরে কাউকে ক্ষতি করার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া বা পরামর্শ দেওয়া গুরুতর অপরাধ। এতে জীবন ও সম্পদ নষ্ট হয়। কারও জীবন ও সম্পদ নষ্ট করার অনুমতি ইসলামে নেই রসুল (সা.) শরিয়ত অনুমোদিত প্রাণদণ্ড বাস্তবায়নেও অগ্নিদগ্ধ করার অনুমতি দেননি। আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া নিষেধ। আগুনের দুর্ঘটনার বিপদে পড়লে ধৈর্য হারাবেন না। মনে রাখতে হবে আল্লাহতায়ালা যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্য করেন। সবকিছুই আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও বান্দার পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়। এজন্য মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ দিয়েছেন ভালোর জন্য নিয়েছেন। আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাকওয়া রেখে ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কসম যুগের (সময়), নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকিদ করে সত্য এবং তাকিদ করে ধৈর্যের।’ (সুরা আসর, আয়াত : ১-৩)
প্রিয় পাঠক, আসুন আগুনকে ভয় করে আগুন থেকে রক্ষায় নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা ও দোয়া করি। হে আল্লাহ আপনি আমাদের দুনিয়ার অগ্নিকাণ্ড ও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সেই আগুনকে ভয় কর, মানুষ ও পাথর হবে যার ইন্ধন।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত : ২৪)
লেখক : ইসলামিক গবেষক