পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ও বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব দেখছে বিশ্ববাসী। ভুগতে হচ্ছে শতাধিক কোটি মানুষকে। এ নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রণীত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটিই চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে। সরাসরি জলবায়ুর ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ। প্রোভার্টি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৮ কোটি মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু সমস্যার সরাসরি সম্মুখীন। এর মধ্যে ৬০ কোটি চরম তাপে, ৫৭ কোটি দূষণে, ৪৬ কোটি বন্যায় এবং ২০ কোটি খরায় ভুগছে। ৬৫ কোটির বেশি মানুষ একই সঙ্গে অন্তত দুই ধরনের ঝুঁকিতে। ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন। অন্তত এক কোটি মানুষকে প্রতি বছর চারটি বিপদই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শিশু মৃত্যুহার, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সূচকে। খরা, বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই শতভাগ নিরাপদ নয়। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার। সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ- এই চারটি ঝুঁকির কারণে এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবিলায় বিস্তর বনায়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা সমবেত হবেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট অমানবিক দুর্দশা এবং স্থায়ী ক্ষতির দিকগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরে ন্যায্য ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য অর্থ কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেওয়ার জোর দাবি তোলা হোক।