জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার পতনের পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মঞ্চে বরাবর বলে আসছেন, এবারের নির্বাচন হবে ‘ইতিহাস সেরা’। যা জাতির কাম্য। ছাত্রজনতার গণ আন্দোলনে যে জেন-জি স্বৈরসরকার পতনের আন্দোলন বেগবান করে, সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের নারী-পুরুষকে রাজপথে নামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- তারা এর আগে ভোটই দিতে পারেনি। এরা ভোটার হওয়ার আগে-পরে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে প্রহসনের। এবার তারা ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। গণতন্ত্রকামী গোটা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাকিয়ে আছে শান্তিতে নোবেলজয়ী, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার জাতিকে কতটা স্বচ্ছ-সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য। এ ব্যাপারে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তাদের প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়। আগেই জানানো হয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে রোজার আগেই ভোট। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। সোমবার নির্বাচন কমিশন এক প্রস্তুতিমূলক আইনশৃঙ্খলা সভায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিস্তর আলোচনা এবং ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা হয়। নির্বাচন ঘিরে আগে-পরে আট দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখার প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী থাকবে প্রায় ১ লাখ, পুলিশ দেড় লাখ। আনসার-ভিডিপি ৬ লাখ। দীর্ঘ বৈঠকে গণভোট বিতর্ক, নির্বাচন ভন্ডুল করার শঙ্কা, কেন্দ্রে আগুন, ব্যালট পোড়ানো, কালো টাকা ছড়ানোর শঙ্কা এবং এআই চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোট নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশের আবশ্যকতা নেই বলে আশ্বস্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। বলেন, আইনশৃৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্টই ভোটের উপযোগী রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি আর বাস্তব অবস্থার মধ্যে কিছু ফারাক থাকলেও তা দূর করার সময় রয়েছে। সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব, সব বাহিনী, অংশীজন এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিকের সতর্ক ভূমিকায় সত্যিকার ‘ইতিহাস সেরা’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সূক্ষ্মতম ছিদ্রও যেন পূর্বাহ্নেই সিলগালা করা হয়। নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটুক। এবং এসব চোখ বড় করে দেখুক সারা বিশ্ব। জাতি এখন তারই অপেক্ষায়।