বাবা। সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। বাবা মানে একটি স্নিগ্ধ সুনির্মল আকাশ। যার ছায়াতলে নির্বিঘ্নে নির্ভরতার সঙ্গে একটি জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। বাবা মানে একটি পল্লবিত সুশোভিত বটবৃক্ষ। বাবা মানে আমৃত্যু ছায়াদার ছাতা। যে ছাতার নিচে নিরাপদ প্রতিটি সন্তানের জীবন। রোদের প্রখরতা আর শীতের তীব্রতা থেকে সে ছাতার ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া যায় অনায়াসে। কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে বাবার মর্যাদা প্রদানে রয়েছে অনন্য নির্দেশনা। পবিত্র কোরআনুল কারিমে বাবার (এবং মা) সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বিভিন্ন আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না আর পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ শব্দটিও বল না। তাদের ধমক দিও না। বরং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালনপালন করেছেন’ (সুরা বনি ইসরাইল ১৭ : ২৩-২৪)।
হুকুকুল ইবাদ তথা মানুষের অধিকারের মধ্যে পিতামাতার অধিকার অগ্রগণ্য। রসুল (সা.)-কে পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘তারা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম’ (সুনানে ইবনে মাজা : ৩৬৬২)। হাদিসের বার্তা সুস্পষ্ট। পিতামাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করলে, তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকলে আল্লাহর জান্নাত পাওয়া যাবে। পক্ষান্তরে তাদের অন্তরে কষ্ট দিলে জাহান্নাম অবধারিত।
রসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট’ (তিরমিজি : ১৯৬২)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমার ইচ্ছা, এর হেফাজত কর অথবা একে বিনষ্ট করে দাও’ (মুসনাদে আহমাদ : ২১৭৬৫)।
পিতামাতা যদি সন্তানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, সন্তানের প্রতি জুলুম করে, তবু তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না। এই মর্মে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পিতামাতার আনুগত্য করে তার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা থাকে। একজনের আনুগত্য করলে জান্নাতের একটি দরজা খোলা থাকবে। আর যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হয় তাদের জন্য জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা থাকে। একজনের অবাধ্যতা করলে জাহান্নামের একটি দরজা উন্মুক্ত থাকবে। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলুল্লাহ! যদি পিতামাতা সন্তানের ওপর অবিচার করে? নবীজি বললেন, সন্তানের প্রতি পিতামাতা অবিচার করলেও তাদের হক নষ্ট করার দরুন তাকে জাহান্নামে যেতে হবে’ (মেশকাত : ৪৯৪৩)। এ থেকে বোঝা যায়, মা-বাবার সম্মান ও মর্যাদা কতটা ঊর্ধ্বে।
মা-বাবা সন্তানের জন্য বিরাট নেয়ামত। তাদের খেদমত ও সেবাযত্ন করার সওয়াব সন্তান আখেরাতে যেমন পাবে, দুনিয়াতেও এর সুফল ভোগ করবে। এই মর্মে নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দীর্ঘ হায়াত এবং রিজিক বৃদ্ধির কামনা করে, সে যেন আপন পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে’ (শুয়াবুল ইমান লিল বায়হাকি : ৭৮৫৫)।
পিতামাতার প্রতি সন্তানের সুদৃষ্টি কবুল হজের সওয়াব সমতুল্য। রসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পিতামাতার অনুগত সন্তান তাদের প্রতি দয়ামায়ার দৃষ্টিতে তাকালে আল্লাহতায়ালা প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের নেকি লিখে দেন। সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! যদি প্রতিদিন শতবার তাকায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবু। আল্লাহ তার থেকে বেশি দাতা ও শ্রেষ্ঠ’ (কানজুল উম্মাল : ৪৫৫৩৫)।
বাবা (এবং মা) দুনিয়া এবং আখেরাতে সফলতা লাভের অনন্য উপায়। বাবা-মা আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই আসুন এই উপহারের মূল্যায়ন করি।
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ; টঙ্গী, গাজীপুর