দেড় বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে তিউনিসিয়া, মিসরজুড়ে প্রধানত তরুণদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা ‘আরব স্প্রিং’ সফল হয়নি। প্রায় একই সময়ে থাইল্যান্ডে ‘রেড শার্ট’ আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অল্প কয়েক দিনের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে ও তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলন কেবল সফলই হয়নি, আন্দোলনকারীদের দমনে সরকারের কঠোরতা ও যুদ্ধংদেহী আচরণে আন্দোলন দ্রুত অভ্যুত্থানের রূপ নিয়ে সরকার উৎখাতের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। জীবনের পরোয়া না করে নিরস্ত্র ছাত্ররা যেভাবে অস্ত্রধারী রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের ধাওয়া দিয়ে কোণঠাসা করে ফেলেছিল, তা অভাবিত ও অদৃশ্যপূর্ব। এই ধাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অসহিষ্ণু, নিষ্ঠুর, অহঙ্কারী ও ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পথ বেছে নেবেন, তা কল্পনা করা যায় না।
কিন্তু এ ঘটনা মাত্র এক বছর আগে বাংলাদেশে ঘটেছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, ‘সরকার’ নামে তাঁর পীড়নযন্ত্রের সব চালক, পরিচালক, কারিগর ও মিস্ত্রিরা যে যেদিকে পারেন দুদ্দাড় পালিয়েছেন। যাঁরা তাৎক্ষণিক পালাতে পারেননি, তাঁরা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা সেনানিবাস পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি, অথবা যাঁরা নিতান্তই ভাগ্যবিড়ম্বিত তাঁরা তাঁদের দীর্ঘদিনের যত্নে লালিত সফেদ দাড়ি মুণ্ডন করে চেহারায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের হাতে ধরা পড়ে ‘লাল দালানে’ গেছেন, যে দালানে এত দিন তাঁরা তাঁদের প্রতিপক্ষের লোকজনকে ভরে রেখেছিলেন। এসব শক্তিমান তাঁদের তুলনায় অতি দুর্বল প্রতিপক্ষের সামান্য বাধা ঠেকাতে রাস্তায় নেমে আসা তো দূরের কথা, নিজেদের বাঁচাতে ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে’ তোলেননি।
একটি মাত্র দাবিতে শুরু করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ এক মাসের কম সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী গণ অভ্যুত্থানে পরিণত হয়ে প্রায় স্থায়ীভাবে চেপে বসা একটি সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছে, এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে তা সত্যিই হয়েছে এবং সম্ভবত এ কারণেই বাংলাদেশ ‘সব সম্ভবের দেশ।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও যা করা উচিত, তা করা হয় না বলে বাংলাদেশ বারবার খাদে পড়ে এবং খাদ থেকে সহজে উঠে আসতে পারে না। কারণ যাঁরা যা করেন, বিশেষ করে তা যদি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী মুখ্য নেতার দ্বারাও ঘটে, তাতে তিনি নিজেকে তৃপ্ত ভাবতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটাই বড় ট্র্যাজেডি। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে, স্বাধীন দেশ লাভ করে এবং এমনকি জাতির পিতা হয়েও তাঁর আরও কিছুর আকাক্সক্ষা তখনো পূরণ না হওয়ায় অতৃপ্ত ছিলেন। তাঁকে তৃপ্ত করেছিল ‘রক্ষীবাহিনী’র মতো একটি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী; দেশের সব জনগণের জন্য ‘বাকশাল’ নামে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল এবং ‘এক নেতা, এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’-এর মতো স্লোগান। শুধু দেশের আজীবন শীর্ষপদ ‘সার্বভৌম সম্রাটতুল্য’ ক্ষমতার অধীশ্বর রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটুকুই বাকি ছিল। এই যে না পাওয়ার কষ্ট এবং আরও পাওয়ার আকাক্সক্ষাজনিত অতৃপ্তি জাতিগতভাবে যে শেখ মুজিবের মধ্যে ছিল তা নয়, অবস্থান ও ক্ষমতা অনুযায়ী সব বাঙালির মধ্যে এটি বিদ্যমান। শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের শাসনে অভাব-অনটন, হত্যা-লুটপাট-ধর্ষণে দেশবাসী এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল যে মুজিবের সব কৃতিত্ব ও অবদান তাদের মন থেকে বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল।
হাজার বছরের সেরা বাঙালি ও বাঙালির নয়নমণি, মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাড়ে তিন বছরের আওয়ামী দুঃশাসন ও বুভুক্ষু মানুষের আর্তনাদে লাখো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, লাল সবুজ পতাকা ও পৃথক মানচিত্রের মালিকানা ম্লান হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক কবি আল মাহমুদ কারাগার থেকে লিখেন : ‘পাখিরা কত স্বাধীন/ কেমন অবলীলায় দেয়াল পেরিয়ে যাচ্ছে/ জীবনে এই প্রথম আমি পাখির সৌভাগ্যে কাতর হলাম --।’ একই সময়ে পরলোকগত কবি রফিক আজাদের কলম চিঁড়ে বের হয়েছিল : ‘ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র চিবিয়ে খাব।’ এই অতৃপ্তির কারণগুলো সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা অর্জনের একক দাবিদাররা। কোনো কিছুতেই তাঁদের অন্তর ভরেনি এবং তা ব্যাপ্ত হয়েছে সাধারণ্যে। প্রত্যেকে যাঁর যাঁর অবস্থানে অতৃপ্ত। জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি তাঁদের এই সীমাহীন অতৃপ্তির কারণেই লিখেছিলেন : ‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হয়ে হইল না শেষ।’ অতৃপ্তি শেষ হয়নি। শীর্ষস্থানীয়দের অতৃপ্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোভ-ক্ষমতার লোভ, সম্পদের লোভ, নারীর লোভ। হাই-ইল্ডিং ভ্যারাইটি বা উচ্চফলনশীল ফসলের মতো তাঁদের লোভলালসার ডালপালা ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছিল।
কিসে তৃপ্ত হবে বাঙালির হৃদয়? স্বাধীনতায়? গণতন্ত্রে? ১৯৭১-এ যেমন স্বাধীনতা অর্জনে তাঁরা তৃপ্ত হননি, একইভাবে হারানো গণতন্ত্র ২০২৪-এ ফিরে পেয়েও বাঙালি হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়নি। সবাই অবগত যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রথম কবর রচনাকারী শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিন্তু তা থেকে আওয়ামী লীগ কোনো শিক্ষা নেয়নি। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য, গণতন্ত্রের আজীবন পূজারি শেখ মুজিবের দাফন করা গণতন্ত্রকে জিয়াউর রহমান কবর থেকে তুলে গণতন্ত্রের লাশে জীবন সঞ্চার করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা মানবেন কেন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা। তাঁর পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’য় তো বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্থান নেই। শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল একটি মাত্র দল, ‘বাকশাল’ এবং চারটি মাত্র সংবাদপত্র। পিতার যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর আরাধ্য স্বপ্ন তাঁকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু উভয়ের ভাগ্যের রাহুকালের অবসান কখনো ঘটেনি। শেখ মুজিব তাঁর দোর্দণ্ড প্রতাপের যুগেই জনগণকে ‘বাকশাল’ গেলাতে পারেননি। শেখ হাসিনা তো শেখ মুজিব ছিলেন না। অতএব পদে পদে তাঁকে কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। যে কোনোভাবে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে হবে। তাই করেন তিনি। জনগণের গণতন্ত্রকেই তিনি কাজে লাগান ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে।
দেশবাসী শেখ হাসিনাকে ‘ভোট চোর’, নিশিরাতের ভোটে নির্বাচিত’ অথবা ‘বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী’সহ যত নিন্দাসূচক বিশেষণে বিভূষিত করুক না কেন, দুনিয়াকাঁপানো ঘটনা ছাড়া কোথায় ভোট চুরি হয়েছে, প্রতিপক্ষকে প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি- এসব খবর কে রাখে! অতএব বিশ্বে শেখ হাসিনা গণতন্ত্রিক পদ্ধতিতে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনে জনগণের দ্বারা ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী’, ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’, ‘জাতীয় সার্বভৌত্বের প্রতীক’, ‘পরিবর্তনের অগ্রদূত’, ‘উন্নয়নের পথিকৃৎ’ ইত্যাদি। কথায় বলে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’- পিতা শেখ মুজিবকেও কি তিনি ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন অথবা পিতাকে শুধু অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন? শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের মাঝে শেখ মুজিবের ‘বাকশাল’ খুঁজে পেতে জনগণের বিলম্ব হয়নি। কারণ তারা ‘ঘর পোড়া গরু’, তাই ‘আকাশে সিঁদুরে মেঘ’ দেখে ভীত হয়ে পড়েছিল। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে তিনি সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো জনগণের কাঁধে এমনভাবে চেপে বসবেন, যাকে আর কাঁধ থেকে সহজে নামানো সম্ভব হবে না। নিপীড়নে নিষ্পেষিত জনগণ খড়গহস্ত হয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ভিড়ে মিশে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন উত্তাল রূপ ধারণ করেছিল যে জিয়াউর রহমানের এনে দেওয়া গণতন্ত্রকে পুনরায় হত্যার অপরাধে শেখ হাসিনার জীবন সংশয় হয়ে উঠেছিল। তড়িঘড়ি তিনি ভারতে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু অতৃপ্তি তাঁর পিছু ছাড়েনি। ভারতের রাজধানীতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের নিরাপদ আশ্রয়ে ও আতিথ্যে থেকে তাঁর অতৃপ্তিজনিত আস্ফালন, হম্বিতম্বি চালিয়ে যাচ্ছেন।
অতৃপ্তি তাঁর একার নয়, সবার। অসংখ্য ছাত্র, সাধারণ মানুষ, এমনকি শিশুর জীবন আত্মদান ও পঙ্গুত্ববরণের বিনিময়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ সব যেন এক বছরেই অর্থহীন হয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে বিভক্তি ঘটেছে। তাদের একটি অংশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ বা এনসিপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সমন্বয়কদের কারও কারও বিরুদ্ধে অথবা তাঁদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এই সময়ের বড় দুটি দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এনসিপিকে তাদের পক্ষে টানার চেষ্টাও করছে। এই দুটি দলের মধ্যে বিএনপির অনেক নেতা ‘এনসিপি’র নেতাদের, অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, এমনকি গালিগালাজ করে বক্তব্য রাখছেন।
সব মত ও পথের লোকজনকে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্তমান নেতারা একবারও ভাবেন না যে ২০২৪-এর জুলাই-পূর্ববর্তী সাড়ে ১৫ বছর তাঁরা কী অবস্থার মধ্যে ছিলেন। তাঁদের প্রায় প্রতিটি নেতাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গায়েবি বা সাজানো মামলার আসামি হিসেবে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখলে মাথা নিচু করে চলতে হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পর তাঁরাই ক্ষমতায় যাচ্ছেন। তাঁরা যে তাঁদের সুখস্বপ্নে বিভোর তা তাঁদের কর্মকাণ্ডেই দৃশ্যমান। অন্তর্বর্তী সরকারকে তাঁরা কোনো তোয়াক্কাই করেন না। তাঁদের নিষ্ক্রিয়তায় আওয়ামী লীগ যে ইদানীং কচ্ছপের মতো খোলস থেকে মাথা বের করে পরিস্থিতি যাচাই করছে, তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা বা প্রস্তুতি বিএনপির নেই।
মাঠের আন্দোলনে বিএনপি অতীতে কখনো ভালো কিছু করতে পারেনি। নেতৃত্ব যত দিন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ছিল, তিনি তাঁর আপসহীন দৃঢ়তায় দল পরিচালনা করেছেন। এখন বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে অনিবাসী নেতৃত্ব দ্বারা, যে নেতৃত্ব দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অনবহিত না হলেও অস্বচ্ছ ধারণা নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্ব এখনো মনে করে যে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকার অথবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তথা এনসিপির। বিএনপি অপেক্ষা করছে অপরের আন্দোলনের সাফল্যের ফসল নিজ ঘরে তোলার। সময় অতীতেও তাদের নির্বিকার ভূমিকার বিচার করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক ও অনুবাদক