বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ভালোবাসার জাহাজ টাইটানিকের সেই জনপ্রিয় জুটি

ভালোবাসার জাহাজ টাইটানিকের সেই জনপ্রিয় জুটি

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট

‘টাইটানিক’ দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! অনেকে হয়তো এই চলচ্চিত্রটি দেখেছেন শতবার। এভাবেই দেখতে দেখতে ২৩ বছর কেটে গেছে। তবে মানুষের মনে সেই টাইটানিকের যাত্রী জ্যাক-রোজের অসামান্য প্রেমগাথা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। যে সিনেমায় প্রেমিকা রোজকে বাঁচিয়ে টাইটানিকের সঙ্গে ডুবে যায় নায়ক জ্যাকও। এই জ্যাকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং রোজের চরিত্রে কেট উইন্সলেট। টাইটানিক এবং সেই জনপ্রিয় জুটি নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

রহস্যে টাইটানিক

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল, ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের ঘরে। টাইটানিক তখন মাত্র উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রে পৌঁছেছে। টাইটানিক জাহাজটি যেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল সেই পথে পানির নিচে চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসেছিল আইসবার্গ। এই আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধীরে ধীরে আটলান্টিক সমুদ্রের নীল জলে তলিয়ে যায় এই জাহাজটি। মৃত্যু ঘটে ১ হাজার ৫১৩ জন যাত্রীর। ভাগ্যবান ৬৮৭ জন যাত্রীর জীবন বাঁচলেও পরবর্তী জীবনে তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই দুঃস্বপ্ন। টাইটানিকের ডিজাইনার ‘থমাস এন্ডু’র দাবি ছিল টাইটানিক কোনো দিন ডোবানো সম্ভব হবে না। আসলে তিনি গায়ের জোরে কথা বলেননি। টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যা সব প্রকার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যেও সমুদ্রে বুক চিতিয়ে চলতে পারবে। কিন্তু যেদিন টাইটানিক ডুবে যায় সেদিন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪ দিন। যেই জাহাজ জীবনেও ডোবানো সম্ভব নয়, সেই জাহাজ কিনা মাত্র ৪ দিনেই ডুবে গেল। আপাতদৃষ্টিতে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কায় টাইটানিকডুবির কারণ বলা হলেও এর সঠিক যুক্তি কোনো গবেষকই দিতে পারেননি। এর ফলে এই জাহাজডুবির ঘটনা রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।

টাইটানিকে জ্যাক-রোজ প্রণয়

বিশ্বের অন্যতম বৃহদাকার জাহাজ ‘টাইটানিক’। ১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরন পরিচালিত এই ছবি নতুন করে প্রেমের সংজ্ঞা লিখেছিল। সেই টাইটানিকের যাত্রী ছিল জ্যাক ও রোজ। সমুদ্র যাত্রার সঙ্গে বাড়ে তাদের প্রণয়। প্রথম যাত্রাতেই হাজার খানেক যাত্রী নিয়ে আটলান্টিক সাগরে ডুবে যায় জাহাজটি। প্রেমিকা রোজকে বাঁচিয়ে টাইটানিকের সঙ্গে ডুবে যায় নায়ক জ্যাকও। জাহাজে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান কয়েকজনের মধ্যে ছিল রোজ। তার চোখেই টাইটানিকের গল্প দেখা হয়। যিনি বেঁচে ফিরেছিলেন তার প্রেমিক জ্যাকের মাধ্যমে। রোজের চরিত্রে কেট উইন্সলেট এবং জ্যাকের চরিত্রে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও আজও সমানভাবে দর্শকের মনে দাগ কেটেছেন।

 

টাইটানিকে বদলে যাওয়া ডিক্যাপ্রিও

ডিক্যাপ্রিওর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিল ‘টাইটানিক’। ১৯৯৭ সালে ডিক্যাপ্রিও জেমস ক্যামেরন পরিচালিত টাইটানিক চলচ্চিত্রে ২০ বছর বয়সী জ্যাক ডসনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথমে এই চরিত্রে অভিনয় করতে না চাইলেও ক্যামেরনের আত্মবিশ্বাসের কারণে এই চরিত্রে অভিনয় করতে অনুপ্রাণিত হন তিনি। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ১.৮৪৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ডিক্যাপ্রিওকে। মার্টিন স্করসিস, জেমস ক্যামেরন, রিডলি স্কট, স্টিভেন স্পিলবার্গ, ক্লিন্ট ইস্টউড, ক্রিস্টোফার নোলান, কোয়েন্টিন টারেন্টিনোর মতো বিখ্যাত নির্মাতারা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর কথা ভেবে চরিত্র সৃষ্টি করেন।

 

কেট থেকে রোজ

পুরো নাম কেট এলিজাবেথ উইন্সলেট। অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি একজন গায়িকাও বটে! উইন্সলেটের জন্ম যুক্তরাজ্যের, বার্কশায়ারের রিডিংয়ে। তার মা স্যালি অ্যান ছিলেন পানশালার একজন পরিবেশনকারিনী এবং বাবা রজার জন উইন্সলেট ছিলেন সুইমিংপুল ঠিকাদার। তার বাবা-মা দুজনই ছিলেন ‘খুচরা অভিনেতা’। তাই উইন্সলেট শিক্ষাদীক্ষার তেমন সুযোগসুবিধা পাননি। তাদের অবস্থা ছিল অনেকটা ‘দিন আনি দিন খাই’ এর মতো। উইন্সলেট বড় হন একজন অ্যাঙ্গলিকান হিসেবে। টেলিভিশনে অভিনয়ের মাধ্যমে উইন্সলেট তার পেশাজীবন শুরু করেন। তবে ১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের নির্মাণে টাইটানিকে তার রোজ চরিত্রটি সব হিসাব পাল্টিয়ে দেয়। হয়ে যান ইতিহাসের একটি অংশ।

 

জ্যাক বেঁচেও যেতে পারতেন!

‘টাইটানিক’ জাহাজ ডোবার কষ্টে কারও চোখ ভেজেনি, ভিজেছে একটি প্রেম ডোবার কারণে! এখনো দর্শকদের মনে শিহরণ জাগায় এই ছবির দৃশ্যপট। ভক্তরা এখনো এ নিয়ে তর্ক করেন যেÑ কী দরকার ছিল জ্যাকের মারা যাওয়ার? রীতিমতো নকশা এঁকে, পিথাগোরাসের তত্ত্ব দিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া হয়, যে কাঠের দরজার ওপর ভাসছিল রোজ, তাতে কষ্টেসৃষ্টে হলেও ঠাঁই হতে পারত জ্যাকেরও। বেঁচে যেতে পারতেন দুজনই। যারা এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক করেন তারা জেনে খুশি হবেন যে, কেট উইন্সলেটও তাদের পক্ষে! তিনি বলেন, ‘আমিও একমত। আমারও মনে হয়, ওই ভাসমান দরজায় ওরও জায়গা হয়ে যেত।’ পরিচালক অবশ্য বেশ কয়েকবারই ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, প্রশ্নটা জায়গার ছিল না। প্রশ্নটা ছিল, দুজনের ভার সহ্য করে নিয়ে কাঠের খুঁটি ভেসে থাকতে পারত কি না।’ জ্যাক ডুবেছে বলেই হয়তো ক্ল্যাসিক হয়ে উঠেছে ‘টাইটানিক’র গল্প!

 

কেটকে ভালোবাসেন ডিক্যাপ্রিও

অস্কার পুরস্কার পাওয়া ‘টাইটানিক’ ছবিতে কেট উইন্সলেট এবং লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও জুটির অসাধারণ অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন অগণিত দর্শক। আর কেটকে নিজের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব বলার পাশাপাশি তার প্রশংসায় সর্বদা পঞ্চমুখ ডিক্যাপ্রিও। কেটকে ভালোবাসেন বলেও জানা যায়। ডিক্যাপ্রিওর কথায়, ‘আমার চোখে সবচেয়ে চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি। তার ভিতর কোনো ভনিতা নেই। কেট উইন্সলেট নামের মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি।’ ‘টাইটানিক’ ছবিতে একসঙ্গে কাজের সুবাদে কেট ও ডিক্যাপ্রিওর মধ্যে সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে তারা সেই বন্ধুত্বকে ধরে রেখেছেন। 

 

কেটের চোখে ডিক্যাপিও

তারকা কেট উইন্সলেট বিশ্বাস করেন যে, তার প্রিয়তম বন্ধু ও ‘টাইটানিক’ ছবিতে তার জুটি তারকা অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর বয়স যত বাড়ছে, ততই তিনি আরও সুদর্শন হয়ে উঠছেন। ৪৪ বছর বয়সী কেট ‘টাইটানিক’ ছবিতে যে সময় অভিনয় করেছিলেন, তখন তিনি বয়সে নিতান্তই তরুণ। সেটা ১৯৯৭ সালের কথা। লিওনার্দোর বয়স এখন ৪৫ বছর। সমবয়সী এই দুই তরুণ-তরুণীর অভিনয়ের রসায়নটিও অসাধারণ হয়েছিল। বলতে গেলে এই জুটির প্রথম যৌবনের স্মৃতিঘেরা ছবি টাইটানিক।

 

প্রেমের গুঞ্জন

বেশ কয়েকবার অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটকে দেখা গিয়েছিল তার সহ-শিল্পী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে ‘ডেটিং’ করতে। এর আগে সেন্ট ট্রোপেজে এক সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছিলেন টাইটানিকখ্যাত এই তারকা জুটি। সেই ছবি ভাইরাল হয় অনলাইনে। এরপর গুঞ্জনের সূত্রপাত হয়। তবে তারা সেগুলো অকপটে অস্বীকার করেছিলেন।

 

এখনো ‘টাইটানিক’ প্রেমে বিভোর তারা

‘টাইটানিক’-এ প্রেমের অভিনয় করেছিলেন কেট-ডিক্যাপ্রিও। সেই ইতিহাস ২৩ বছরের পুরনো হলেও এখনো সেই পুরনো প্রেমে বিভোর রয়েছেন এই তারকাজুটি। টাইটানিক মুক্তির এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও দীর্ঘদিনের বন্ধু কেট এবং লিওনার্দো এখনো সেই পুরনো প্রেমে বিভোর রয়েছেন। এই অভিনয় তারকারা এখনো টাইটানিকের সংলাপ আওড়ান।

সর্বশেষ খবর