বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বলিউডের যত তারকা কৌতুক অভিনেতা


বলিউডের যত তারকা কৌতুক অভিনেতা

বলিউডের ছবিতে নায়কদের পাশাপাশি কৌতুক অভিনেতারাও রীতিমতো তারকা। শুধু দর্শকচাহিদা নয়, পরিবেশকরাও নির্মাতাদের শর্ত জুড়ে

দিতেন ছবিতে অমুক কৌতুক অভিনেতা অবশ্যই থাকতে হবে। তারকা কৌতুক অভিনেতা মানেই ছবি হিটের অন্যতম ফর্মুলা। এমন কয়েকজন কৌতুক অভিনেতার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

হকার থেকে জনি ওয়াকার

মাতালের অভিনয় তিনি এতই ভালো করতেন যে, হুইস্কির বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নামে রুপালি পর্দায় তার নাম হয় জনি ওয়াকার। অথচ তিনি কখনো মদ স্পর্শ করেননি। বলিউডের কিংবদন্তি কৌতুকশিল্পী জনি ওয়াকারের প্রকৃত নাম বদরুদ্দিন জামালুদ্দিন কাজি। ভারতের ইন্দোরে জামালুদ্দিন কাজির জন্ম। বাবা ছিলেন কারখানা শ্রমিক। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে জামালুদ্দিন দ্বিতীয়। তার বাবা যে কারখানায় চাকরি করতেন সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অভাবে পড়ে পরিবারটি। তারা মহারাষ্ট্রে চলে আসেন। এখানে পরিবারে একমাত্র উপার্জন করতেন জামালুদ্দিন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে কাজে নামতে হয় তাকে। রাস্তায় রাস্তায় লজেন্স, ক্যান্ডি, কুলফি, সবজি ও নানা ধরনের জিনিস ফেরি করতেন। অভিনয়ের প্রতি দারুণ আগ্রহী ছিলেন। বস্তির শিশুদের অভিনয় দেখাতেন। একটু বড় হয়ে মুম্বাইয়ে বাসের হেলপার হন। পরে বাসের কনডাক্টর হন। এ সময় বাসযাত্রীদের অভিনয় দেখিয়ে আনন্দ দিতেন। একসময় একজন সহকারী পরিচালক তাকে ‘হালচাল’ ছবিতে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে পার্ট দেন। প্রখ্যাত অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা বলরাজ সাহানির নজরে পড়েন তিনি। সাহানি তাকে নিয়ে যান পরিচালক গুরুদত্তের কাছে। মাতালের ভূমিকায় তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গুরুদত্ত তার নতুন নাম দেন জনি ওয়াকার। ১৯৫১ সালে মুক্তি পায় গুরুদত্তের নতুন ছবি ‘বাজি’। এই ছবিতে অভিষেক ঘটে জনির। গুরুদত্তের ছবিতে নিয়মিত শিল্পী হন জনি ওয়াকার। ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘সিআই ডি’, ‘মেরে মেহবুব’, ‘পিয়াসা’ ইত্যাদি ছবির দৌলতে জনি ওয়াকার কমেডি অভিনয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তার নামে টিকিট বিক্রি বেশি হতো। পরিবেশকদের দাবি ছিল- ছবিতে জনি ওয়াকার থাকতে হবে। তিনি ছবিতে গান গেয়েও তুমুল জনপ্রিয়তা পান। জনি ওয়াকার ৩০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘চাচি ৪২০’ মুক্তি পায়। ‘মধুমতি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৫৮ সালে পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ‘শিকার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার আসরে কমেডি চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।

 

জওহরলাল নেহেরুকে মুগ্ধ করেন জগদীপ

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি। মঞ্চের নাম জগদীপ, বলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কৌতুক অভিনেতা। ৪০০-এরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। বিখ্যাত ‘শোলে’ ছবিতে তার চরিত্রের নাম ছিল ‘সুরমা ভূপালি’। এই চরিত্রে এতটাই মজার অভিনয় করেছিলেন যে, পরে সবাই তাকে সুরমা ভূপালি বলেই ডাকতেন। জগদীপ শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়জীবন শুরু করেন। বিআর চোপড়ার ‘গুলি আফসানা’ তারপর ‘আব দিল্লি দূর নেহি’র মতো চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কে এ আব্বাসের ‘মুন্না’, গুরুদত্তের ‘আর পার’ থেকে, বিমল রায়ের ‘দো বিঘা জমিন’ এবং এভিএমের ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’ ছবিতে অভিনয় করেন। ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’র পরে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’ তে তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য জগদীপের কাছে ব্যক্তিগত কর্মীর মাধ্যমে উপহার পাঠান। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গলি গলি শোর হ্যায়’ ছিল তার শেষ অভিনীত ছবি।

‘শোলে’ ছবির সেই জেলার আসরানি

রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’ ছবির সেই বিখ্যাত চরিত্র ‘জেলার’। যার মুখে একটি সংলাপ ‘ফলো মি ...হা..হা..’ এখনো দর্শকদের হাসায়। এই চরিত্রটি রূপায়ণ করে যিনি বিখ্যাত কমেডিয়ান বনে যান তিনি হলেন আসরানি। পুরো নাম গোবর্ধন আসরানি। অভিনয় করবেন এমন ইচ্ছা তার ছিল না। বন্ধুদের অনুরোধে অভিনয়ে আসেন। কারণ তার কথা বলার ঢংয়ের মধ্যেই ছিল কমেডির ছাপ। অভিনয়ে তিনি শুধু অভিনেতা হিসেবেই সফল হননি; প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক রূপেও পেয়েছেন সাফল্য। শুধু হিন্দি নয়; গুজরাটি, পাঞ্জাবি ও ইংরেজি ছবির জন্যও পা-ুলিপি লেখেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হলো- তোফা, আকলমান্দ, ঘর এক মন্দির, জাস্টিস চৌধুরীসহ প্রায় তিন শতাধিক ছবি।

 

মীনা কুমারীকে টেবিল টেনিস শেখান মেহমুদ

মেহমুদ আলী। চলচ্চিত্রে মেহমুদ নামে পরিচিত এই অভিনেতা গায়ক, পরিচালক এবং প্রযোজকও ছিলেন। তিনি হিন্দি ছবিতে কমিক চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। চার দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে তিনি তিন শতাধিক হিন্দি ছবিতে কাজ করেন। মেহমুদ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য ২৫ বার মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে কমেডি ভূমিকায় সেরা পারফরম্যান্সের জন্য ১৯ বার মনোনয়ন পান। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি কিসমত চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন। পরে তিনি বেশ কয়েকটি অদ্ভুত পেশায় কাজ করেন। যেমন- হাঁস-মুরগির পণ্য বিক্রি করেছিলেন। পরিচালক পিএল সন্তোষীর ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেন। মেহমুদ অভিনেত্রী মীনা কুমারীকে টেবিল টেনিস শিখিয়েছিলেন।

১৯৫০ সালে অভিনেত্রী মীনা কুমারীর ছোটবোন মধুকে বিয়ে করেন। তিনি সিআইডি, দো বিঘা জমিন ও  পিয়াসা ছবিতে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন। তবে কৌতুক অভিনয়ের জন্য বেশি প্রশংসা পান।

 

ঈশ্বরের ইচ্ছায় অভিনয় ছাড়েন জনি লিভার

জনি লিভার। হিন্দি চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। লিভার ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান পুরস্কারের জন্য ১৩ বার মনোনীত হন এবং দিওয়ানা মাস্তানা (১৯৯৭) ও দুলহে রাজা (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করে। তিনি ১৯৮৪ সালে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন এবং এ যাবৎ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জনি লিভার খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। একসময় তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন। জনির কথায়, এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল। একটি ঘটনা আমার জীবনকে বদলে দেয়। আমার ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। আমি অসহায় হয়ে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলাম। আমি চলচ্চিত্রে কাজ বন্ধ করে দিই এবং তার জন্য প্রার্থনায় আমার পুরো সময় ব্যয় করি। ১০ দিন পরে যখন তাকে একটি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় তখন ক্যান্সার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা অবাক হয়েছিলেন। এটি আমার নতুন জীবনের শুরু ছিল।

 

দিলীপ কুমারের আমন্ত্রণে অভিনয়ে কাদের খান

কাদের খান। ১৯৭০ সালে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পুরকৌশলের শিক্ষক ছিলেন। তখন কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন। বলিউড মোগল দিলীপ কুমার তার অভিনয় সম্পর্কে জানতে পেরে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আমন্ত্রণ জানান। তার সঙ্গে  সাগিনা মাহাতো এবং বৈরাগ ছবিতে কাজ করেন দিলীপ।

৪৫০টিরও বেশি হিন্দি ও উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ২৫০টিরও বেশি সিনেমার সংলাপ লিখেছেন। মনমোহন দেশাই ১৯৭৪ সালে ‘রুটি’ সিনেমার সংলাপ লেখার জন্য ১ লাখ ২১ হাজার রুপি পরিশোধ করেন। তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান।

 

পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত পরেশ রাওয়াল

পরেশ রাওয়াল। ২০১৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে অভিনয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে শ্রেষ্ঠ হাস্যকার হিসেবে সম্মানিত করা হয়। শ্রী রাওয়াল কেতন মেহতা পরিচালিত ছবি ‘সরদার’-এ স্বাধীনতা সংগ্রামী বল্লভভাই প্যাটেল চরিত্রে অভিনয় করে সবার মন জয় করেন। রাওয়াল তার অভিনয় জীবন শুরু করেন ১৯৮৪ সালে। তখন তিনি হোলি নামক ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। তারপর ১৯৮৬ তে নাম ছবিতে দক্ষ অভিনয় করে জনপ্রিয় হন। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যেই শতাধিক সিনেমায় খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার মধ্যে কব্জা, দৌড়, কিং আঙ্কল, বাজি, রামলক্ষণ উল্লেখযোগ্য। তিনি আন্দাজ আপনা আপনা চলচ্চিত্রে প্রথম ডাবল রোল করেন। এরপর পরিচালক প্রিয়দর্শনের ‘হেরা ফেরি’, ‘ফের হেরা ফেরি’সহ বেশ কিছু ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাতি পান।

 

সর্বশেষ খবর