শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রের এ দায়ভার কে নেবে

চলচ্চিত্রের এ দায়ভার কে নেবে

কাজী হায়াৎ

দেশি চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রায় অস্তিত্ব সংকটের পথে। ছবি নির্মাণ হ্রাস, সিনেমা হল বন্ধ, হলবিমুখ দর্শক, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি নেই। এমন অগণিত সমস্যায় যখন চলচ্চিত্রশিল্প মৃতপ্রায় অবস্থায় তখনই কিছু শিল্পী আবার নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজের সামনে চলচ্চিত্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছেন। চলচ্চিত্রের এ দায়ভার কে নেবে। তাঁদের বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্রের মানমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে সবার দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন

চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। চলচ্চিত্র দেশ, সমাজ ও পরিবার বিনির্মাণে প্রচুর ভূমিকা রাখে। আবার বলতে পারি চলচ্চিত্র হচ্ছে আবেগ তৈরির কারখানা। চলচ্চিত্র দেখে দর্শক অনেক ভালো কিছু শিখতে পারে। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবারই এই শিল্পের মানমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার দিকে দৃষ্টি দেওয়াটা একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়টিকে অবহেলা করে যাঁরা নানা বিতর্কিত কাজের মাধ্যমে শিল্পটিকে কলুষিত করছেন বা যাঁদের দ্বারা কলুষিত হচ্ছে তাঁদের কোনোভাবেই এই অঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এদের চলচ্চিত্রের মানমর্যাদা রক্ষায় নিজেকে সংযত রেখে বুঝেশুনে চলা উচিত। কারণ চলচ্চিত্রের প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি থাকে।

 

সোহানুর রহমান সোহান

কদিন পরপর এসব বিষয় শুনতে ভালো লাগে না

আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক শিল্পী এর আগে কাজ করে গেছেন। তাঁদের নিয়ে তো  কোনো দিন এসব হতো না। সেই শিল্পীদের এখনো ভক্তদের মনে আছে। কিন্তু পরীমণিকে নিয়ে এসব বিষয় আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমার পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলাটি এখনো বিচারাধীন। বিচার প্রক্রিয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব পরীমণির বিষয়ে। এই যে মডেল পিয়াসা-মৌ হয়তো একটা সময় আমাদের মিডিয়ায় কাজ করতেন। এখন তাঁরা অন্য পেশায় আছেন। কিন্তু তাঁদের ঘিরে মিডিয়ায় যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ও সাধারণ মানুষ জানতে চায়, আসলে কি হয়েছিল। 

 

রোজিনা

চলচ্চিত্রের জন্য দুঃখজনক

আমার একটিই ক্ষোভ একসময় তো এমন অবস্থা ছিল না। এখন কেন প্রায়ই দেখতে পাই চলচ্চিত্রের কিছু মানুষ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করে চলচ্চিত্রশিল্পের বদনাম ছড়াচ্ছেন এবং চলচ্চিত্র জগৎটাকেই কলুষিত করছেন। এটি এ জগতের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক। বিশেষ করে মেয়ে শিল্পীদের মধ্যে অনেকে কেমন যেন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছেন। সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি এদের যেন কোনো আগ্রহ নেই। চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করে কেউ যদি বিতর্কিত কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যান তাহলে এই শিল্পের স্বার্থে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। চলচ্চিত্রের মতো একটি সমাজসচেতন বিনোদন শিল্পকে কারও অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া কখনো এই শিল্প বা এর বাইরের সচেতন মানুষের কাম্য হতে পারে না।

 

মিয়া আলাউদ্দীন

চলচ্চিত্রের স্বার্থে এসব প্রতিহত করতে হবে

চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি কোনো বিতর্কিত কর্মকান্ড করেন তা এই শিল্পের জন্য সত্যিই খুব দুঃখজনক। এসব মেনে নেওয়া যায় না। কারণ চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। একটি দেশের জীবন সংস্কৃতি ফুটে ওঠে এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে মানুষ সুস্থ বিনোদন লাভ করে ও সমাজ বিনির্মাণে অনেক কিছুই শিখতে পারে। একসময় শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই মানুষ সিনেমা দেখতে যেত এবং এ নিয়ে আমরা চলচ্চিত্রকাররা গর্ব বোধ করতাম। আজ চলচ্চিত্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু মানুষের জন্য শিল্পটি বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে এবং চলচ্চিত্রশিল্পের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। চলচ্চিত্রের স্বার্থে এসব কর্মকান্ড আমাদের প্রতিহত করতে হবে।

 

মিশা সওদাগর

শিল্পের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এই কর্মকান্ড লজ্জাজনক

চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি এই শিল্পের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে অপকর্ম করে তা শিল্পটির জন্য অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জাজনক। যাঁরা এমন গর্হিত কাজ করেন তাঁদের জন্য পজিটিভ উদাহরণ হিসেবে রাজ্জাক, শবনম, শাবানা, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানাসহ আমাদের নিয়ে ভাবা উচিত। আমরা সুস্থ কাজের মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে মানমর্যাদার আসনে উপবিষ্ট করিয়েছিলাম। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হলে আগে নিজেকে সংযত রাখতে হবে। কোনো শিল্পী যদি বিতর্কিত কাজ করে শিল্পী সমিতি তাঁর সেই অপকর্মের দায় কখনো বহন করবে না। বরং অপকর্ম প্রমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

 

খোরশেদ আলম খসরু

এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার

একটি পরিবারে ভালোমন্দ দুই-ই থাকতে পারে। চলচ্চিত্র পরিবারও তাই। এখানে কিছু মন্দ মানুষ থাকতেই পারে। চলচ্চিত্রকারদের কাজ হচ্ছে যাঁরা এসব করবে তাঁদের জন্য ঘরোয়াভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ আমি চাই না কারও কারণে চলচ্চিত্রের মানমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হোক এবং বাইরের মানুষ তা জেনে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি তাঁদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মাক। আর যাঁরা অপকর্ম করেন তাঁরা যেই হোক তাঁদের আমি কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। কারণ এতে এই প্রধান গণমাধ্যমটির সম্মানহানি হয়। কারও বিতর্কিত কার্যকলাপ কোনো সুস্থ মন-মানসিকতার মানুষের কাম্য হতে পারে না।

 

জায়েদ খান

এখানে কোনো অসুস্থ মনমানসিকতাসম্পন্ন মানুষের স্থান নেই

শিল্পীদের ধ্যান-জ্ঞান হতে হবে কাজ। তাঁরা শুধু কাজের পেছনেই ছুটবে। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি সুস্থ শিল্প সংস্কৃতি চর্চার স্থান। এখানে কোনো অসুস্থ মনমানসিকতা-সম্পন্ন মানুষের স্থান নেই। তাঁদের জন্য এই শিল্পের প্রতি কেউ আঙুল তুলুক বা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুক তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃতঅর্থে শিল্পীরা সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে মানুষকে সুস্থ বিনোদন ও বাণী  দেবেন। তাঁরা কেন বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে শিল্প ও শিল্পীদের মানমর্যাদা ক্ষুণœ করবেন। এ অবস্থা কখনো মেনে নিতে পারি না। কোনো শিল্পী যদি ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কে জড়ায় তাহলে তাঁকে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে বয়কট করা উচিত।

সর্বশেষ খবর