রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : মৌসুমী

চলচ্চিত্রের রাজনীতিতে জড়াতে চাই না

চলচ্চিত্রের রাজনীতিতে জড়াতে চাই না

মৌসুমী, ‘প্রিয়দর্শিনী’ খ্যাত এই অভিনেত্রী একাধারে অভিনয়,  নির্মাণ আর সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে সফলতা দেখিয়েছেন এবং প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দুই দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় জীবন এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁরই বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কেমন আছেন, সময় কীভাবে কাটছে?

জি ভালো আছি। অভিনয়, সামাজিক কাজ আর সংসার নিয়ে সময়টা ভালোই কেটে যাচ্ছে।

 

আপনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত। তাছাড়া করোনাকাল ও সাম্প্রতিক বন্যার সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিজের সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু বলুন।

প্রথমেই বলতে চাই আমাদের সবাইকে অবশ্যই শিশু ও নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যদি আমরা এটা করতে পারি, তবেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। অভিনয়ের পাশাপাশি নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়নে মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৩ সালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডরস নিযুক্ত হই। এরপর থেকে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুর পুষ্টি, জন্ম নিবন্ধন, শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শিশুর টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আসলে অভিনয় দিয়ে মানুষকে বিনোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আজীবন কাজ করে যেতে চাই।

 

নিজেকে অসাধারণ ভেবেছেন কখনো?

না, নিজেকে এমনটা কখনো ভাবিনি। সাধারণ একটা মেয়ে ছিলাম। একটা ছবিতে কাজ করব। সবাই দেখবে, ভালো বলবে। নিজের আলাদা একটা পরিচয় হবে- এটুকু পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতে পেরেছি। কিন্তু তারপর যেসব ঘটে গেছে সেগুলো স্বপ্নের বাইরে ছিল। অভিনয় শুরুর আগে আদর্শ মানতাম শাবানা ও ববিতা ম্যাডামকে। পরবর্তীতে নায়িকা শাবনাজের অভিনয় দেখে অনুপ্রাণিত হই। শাবনাজের ‘চাঁদনী’ ও ‘দিল’ ছবিটি হলে গিয়ে দেখার পর মনে হলো, শাবনাজ পারলে আমি কেন পারব না? দিনে দিনে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। এই মনোবলের কারণেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।

 

দুই দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি কেমন?

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, দর্শকদের ভালোবাসা। শিল্পীজীবনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এর কোনো হিসাব মেলাতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি আসলেই এত বেশি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? যে মানুষটিকে আমি চিনি না, জানি না, সে মানুষটিই আমার অজান্তে আমাকে এত ভালোবাসতে পারে? ভাবতেই অবাক লাগে। আবার ভাবী, এরকম ভালোবাসা একজন শিল্পীর প্রতি আছে। হতে পারে। এরকম হয় বোধহয়।

 

একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে কতটা পূর্ণ মনে করেন?

সত্যিকারের একজন শিল্পী অভিনয়ের পথচলায় নিজেকে কখনই পরিপূর্ণ মনে করেন না। শিল্পীমনে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার আকাক্সক্ষা থেকেই যায়। আমারও সেই অতৃপ্তি আছে, চ্যালেঞ্জিং আরও নতুন চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা আছে। হ্যাঁ, এটা সত্যি, একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করে সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষুধা নিবারণ হয়, কিন্তু পরে আবার সেই ক্ষুধা সৃষ্টি হয়। শিল্পীমন এমনই। তবে আমার কর্মজীবনের পূর্ণতা পাবে তখনই যখন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারব।

 

দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে জাতীয় রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা রয়েছে?

আমার স্বামী ওমর সানি যদি চান এবং যদি কখনো মনে হয় যে, জাতীয় রাজনীতিতে আসা যেতে পারে, তখন এটা নিয়ে ভাবতে পারি। তবে তারও আগে এর ওপর আমার অনেক পড়াশোনাও করতে হতে পারে। যা-ই করি না কেন, একটু ভেবেচিন্তেই করতে হবে। সত্যি বলতে কী, এ বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন কিছু ভাবিনি।

 

চলচ্চিত্রেও রাজনীতি আছে, এই রাজনীতির মুখে পড়েছেন কখনো?

চলচ্চিত্রের রাজনীতি যে আমি বুঝি না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু এর সঙ্গে নিজেকে জড়াইনি কখনো। আমাকে নিয়ে চলচ্চিত্রে যেসব রাজনীতি হতো কিংবা যেসব প্রশ্ন উঠত, আমার কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল। চাইলেই উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু দিতাম না। কারণ আমি শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এসব রাজনীতি নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। চলচ্চিত্রের রাজনীতিকে কখনই আমলেও নিইনি। নিজের কাজেই মগ্ন ছিলাম।

 

স্বপ্নের চলচ্চিত্র বা চরিত্রে অভিনয় করা হয়েছে কি?

স্বপ্নের চলচ্চিত্র বা স্বপ্নের চরিত্রে এখনো কাজ করা হয়ে ওঠেনি। তবে এখনই স্বপ্নের চরিত্রটি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। স্বপ্নের কথা বলে দিলে তো অন্য কেউ সেটি নিয়ে নেবে। তাই সেটি আমার কাছেই থাক। স্বপ্নের চরিত্রে যদি কাজ না করতে পারি, তা হলে আমি নিজের হাতে সেই স্বপ্নের চরিত্রটি সৃষ্টি করব, আমি নিজেই সে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করব।

 

তা হলে আবারও নির্মাণে আসছেন?

আবারও নির্মাণে আসব। তবে এখনই নয়। এটি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রস্তুত হয়ে সময় ও সুযোগ করে আবারও নির্মাণে নেমে পড়ব।

 

আগামীতে দর্শক আপনার কোন চলচ্চিত্রটি দেখতে পারবে?

বেশকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি।  এর মধ্যে শিগগিরই মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে জাহিদ হোসেন পরিচালিত ‘সোনার চর’ চলচ্চিত্রটির।

সর্বশেষ খবর