গাঢ় সিঁদুরে লাল রঙের মনোমুগ্ধকর এক ফুল হলো পালাম। কেউ কেউ একে ‘পালান’ নামেও চিনেন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে ফুটেছে এই অনন্য ফুল। শহীদ মিনারের পেছনের গাছটি ছাড়াও একাডেমিক ভবন এক ও চার নম্বরের সামনের গাছেও দেখা মিলেছে পালাম ফুলের। ছাত্রী হলের সামনের গাছে এখনো ফুল না ফুটলেও দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্যমতে, গাছটির কাণ্ড বা পাতা ছিঁড়লে দুধের মতো সাদা কষ বের হয়। একসময় গ্রামের মানুষ বাঁশের চিকন শলাকায় এই কষ মাখিয়ে গাছে বা মাটিতে রেখে পাখি শিকার করত। মাঝারি আকারের এই গাছটি সাধারণত ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। পাতাগুলো ডিম্বাকৃতির ও উজ্জ্বল সবুজ। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Eriolaena lushingtonii, ইংরেজি নামেও এটি পরিচিত।
পালাম ফুল সাধারণত বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে ফোটে এবং মে মাসের পর তা আর দেখা যায় না। একটি ডালের ডগায় চার থেকে পাঁচটি ফুল একসঙ্গে ফোটে। ফুলের আশেপাশে সারাদিন মাছির ওড়াউড়ি লেগেই থাকে। ফুলের কাঠ সাদা, নরম ও হালকা হলেও পরিপক্ব গাছের কাঠ বেশ টেকসই। বংশবিস্তার ঘটে বীজের মাধ্যমে।
প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রী রানা মাসুদ বলেন, এক সময় পাহাড়ি এলাকায় এই গাছটি সহজেই চোখে পড়ত। বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাই প্রথম বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পালাম গাছ ছড়িয়ে দেন।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক ও বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, ফুলের গঠন শিমুল ফুলের মতো ভারী। দূর থেকে গন্ধ টানে না, তবে কাছে নিলে ঝাঁজালো ও তীব্র মনছোঁয়া ঘ্রাণ অনুভব হয়।
বেরোবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও এই গাছগুলোর প্রধান রোপণকারী ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো বেরোবিতে পালাম ফুল ফুটেছে। অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম এই দৃশ্যের জন্য।
পালাম ফুল থেকে যে বীজ উৎপন্ন হয়, তা দেখতে অনেকটা ধানের মতো এবং তুলার মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফুলের সৌন্দর্য অবলোকনে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। শুধু ক্যাম্পাস থেকেই আসছেন তা নয়, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে আসছেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ