বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : নূরজাহান আলীম

বাবাকে জেনে চিনে তাঁর গান গাইতে হবে

বাবাকে জেনে চিনে তাঁর গান গাইতে হবে

পল্লীগীতির সম্রাট ও কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আবদুল আলীমের কন্যা নূরজাহান আলীম তাঁর বাবার পথ ধরে ও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আবদুল আলীমের কালজয়ী গান এখনো গ্রামবাংলা ও শহরের মানুষকে আন্দোলিত করে। বাবার ও নিজের গান নিয়ে এই প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শুরুতেই জানব সংগীত জগতে আপনার পদার্পণ কার উৎসাহে হয়েছিল?

আমাদের বাসায় সবসময় একটি গানের পরিবেশ বিরাজ করত এবং এখনো করে। ছোটবেলা থেকেই বড় ভাই-বোনদের সঙ্গে গান করতাম। সেখান থেকে আমার গানের শুরু। ছোটবেলা থেকেই বাবার গান শুনে আরও বেশি গানের প্রতি অনুপ্রাণিত হই। আমার মা শ্রদ্ধেয় জমিলা আলীম আমাকে সবসময় গানের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে যেতেন এবং বিয়ের পর আমার স্বামী হিসেবে খান বাবু আমাকে সবসময় গানের ব্যাপারে সহযোগিতা করে আসছে। মূলত তাঁদের সবার উৎসাহে আমার গানের ভুবনে আসা।

 

আপনার বাবার গানের মতো আপনার গানও দর্শকরা বেশ প্রশংসা উপভোগ করে, এতে অনুভূতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

যে কোনো শিল্পী যখন দর্শক প্রশংসা পায় তাঁর খুব ভালো লাগে। দর্শকরা যখন বলে গানটি ভালো হয়েছে, তখন আমার খুব আনন্দ হয়। আসলে অনেক কিছুতেই পরিকল্পনা আছে। আমি জানি না সবকিছু ঠিকমতো করতে পারব কি না। বাবার গানগুলোকে দেশে এবং বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাবাকে যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মনে রাখতে পারে সে জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি।

 

আমি বলব আপনারা বাংলা গান শুনুন বেশি করে, বাংলা গানের সঙ্গে থাকুন আমাদের লোকসংগীতকে বাঁচিয়ে রাখুন। গান শোনার মাধ্যমে  একজন আবদুল আলীমকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঁচিয়ে রাখুন

 

আপনার বাবা আবদুল আলীমের গান বাঁচিয়ে রাখতে আপনার বর্তমান উদ্যোগের কথা শুনতে চাই-

বাবাকে এবং বাবার গান বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। যেমন- গত মার্চ মাসে আবদুল আলীম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। এই সংগঠন থেকে নানা উদ্যোগ রয়েছে, এবং অনেক কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। যেমন- গত ২৭ জুলাই ডাক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বাবাকে নিয়ে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাবার গানের কপিরাইটও করা হয়ে গেছে। রেডিও পাকিস্তান করাচি থেকে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সেখানে থাকা বাবার গানগুলো আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বাবার মতো একজন জাতীয় শিল্পী ও দেশের সম্পদের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি। আপাতত খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নাম ‘আবদুল আলীম ফ্লাইওভার’ নামকরণের জন্য সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছি। বাবার গান থেকে সিলেক্ট করে কিছু গান আমি নিজে করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া আরও অনেক উদ্যোগ রয়েছে। বাবার স্মৃতিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখতে সবই বাস্তবায়ন করা হবে।

 

বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিল্পীই আপনার বাবার গান গাইছেন, তারা কতটা যথাযথভাবে গাইতে পারছেন বলে মনে করছেন?

পরিতাপের বিষয় হলো- বাবার গানগুলো তারা শুনছেন এবং গাইছেন ঠিকই কিন্তু তারা জানছেন না যে, তারা আবদুল আলীমের গানই গাইছেন। শিল্পী আবদুল আলীম সম্পর্কে তাদের আগে জানতে হবে, তারপর সুর, তাল, লয় আর গায়কি হুবহু রেখে তাঁর গানগুলো তারা যদি গান এতে আমার বা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি থাকবে না।

 

বাবার নাম নতুন প্রজন্মকে জানাতে কী করা দরকার?

রেডিও, টিভি, মঞ্চ যেখানেই হোক বাবার গান প্রচারের সময় তাঁর নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া বাবার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে বাবার নামে করা সংগঠন থেকে ফেস্টুন, ব্যানার, লিফলেট প্রকাশসহ নানা উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। এতে নতুন প্রজন্ম সহজেই পল্লী গানের সম্্রাট প্রয়াত আবদুল আলীমকে জানতে ও চিনতে পারবে।

 

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে  যেভাবে গানের প্রচার প্রসার চলছে এটাকে কীভাবে দেখেন?

টেকনোলজি এখন অনেক এগিয়ে গেছে, তাই সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবে সবাই এখন গান আপলোড করছে। এই প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্য এটি আমাদের জন্য খুব ভালো হবে।

 

শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

আমি বলব আপনারা বাংলা গান শুনুন বেশি করে, বাংলা গানের সঙ্গে থাকুন, আমাদের লোকসংগীতকে বাঁচিয়ে রাখুন, গান শোনার মাধ্যমে একজন আবদুল আলীমকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঁচিয়ে রাখুন। কারণ এসব কিছুই আমাদের দেশের ঐতিহ্য এবং সম্পদ, আমাদের শিকড়।

সর্বশেষ খবর