বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : আজাদ আবুল কালাম

শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য শিল্পী অপেক্ষা করে

শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য শিল্পী অপেক্ষা করে

অভিনেতা-নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম। টেলিভিশন নাটকে সমানতালে কাজ করলেও কখনো ভুলে যাননি মঞ্চকে।  নাটক, চলচ্চিত্রে তাঁর শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতায় দর্শকমন জয় করেছেন। এই তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

সম্প্রতি আপনার নির্দেশনায় প্রাচ্যনাটের নতুন মঞ্চনাটকআগুনযাত্রা মঞ্চস্থ হলো...

একটা মানবিক গল্প ‘আগুনযাত্রা’। চার মাস ধরে নানা ধাপে ‘আগুনযাত্রা’কে মঞ্চ উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর কয়েকদিন আগে ঢাকার বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। এর আগে দুই দিন এই নাটকের কারিগরি প্রদর্শনী হয়েছে। সাতটি চরিত্র নিয়ে প্রযোজনাটি।

 

হিজড়া সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী হলেন কেন?

জেন্ডার ইস্যুতে আমাদের দেশে অস্বচ্ছতা আছে, তৃতীয় লিঙ্গ বলতেই অচ্ছুত। এরাও যে মানুষ, এই দাবিটাও উপেক্ষিত হয়। এরা কিন্তু বিশাল একটা সম্প্রদায়। আমরা সেটিই বলতে চেয়েছি।

 

নাটকটি মঞ্চায়নের পেছনের গল্প জানতে চাই...

ভারতের দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার উৎসবে গিয়েছিলাম। তাও বছর দশেক হবে। সেই উৎসবে হিজড়া সম্প্রদায় নিয়ে লেখা মহেশ দাত্তানির লেখা ‘সেভেন স্টেপস অ্যারাউন্ড দ্য ফায়ার’-এর খোঁজ পাই। ভালো লাগে। এরপর সিদ্ধান্ত নিই এটি প্রাচ্যনাটের জন্য মঞ্চে আনব। দেশে ফেরার সময় বইটি আর সঙ্গে করে নিয়ে আসা হয়নি। পরে প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিংয়ের একাডেমিক পরিচালক শহীদুল মামুন বইটি সংগ্রহ করেন। অনুবাদের কাজটিও তিনি করেন।

 

নতুন আরেকটি মঞ্চনাটক নামানোর কথা ছিল সেটির খবর?

নাটকটি লিখেছি। আপাতত নাম ‘নবাব ৭১’। নাম পরবর্তীতে পরিবর্তনও হতে পারে। এই মঞ্চনাটকটি আগামীতে নামানোর চেষ্টা থাকবে। মঞ্চস্থ করতে অন্তত মাস কয়েক তো সময় লাগবেই।

 

সামনের বছর জানুয়ারিতে আপনার অভিনীত শিশুতোষ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে দর্শকের কাছে কেমন লাগবে সিনেমাটি?

আবু রায়হান জুয়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’! এই শিশুতোষ সিনেমাটিতে শিশুদের সঙ্গে অভিনয় করে ভালোই লেগেছে। অন্যরাও অনেক ভালো করেছে। আমার বিশ্বাস, সিনেমাটি দর্শককে মুগ্ধ করবে।

 

পারভেজ আমিনেরআগুন পাখি করেছেন, প্রচারও হচ্ছে...

দীপ্তটিভিতে প্রচার হচ্ছে। লেখক হাসান আজিজুল হকের দীর্ঘ উপন্যাস ‘আগুন পাখি’ থেকে নির্মিত। গল্প ও চরিত্র যথাযথভাবে প্রোট্রেট করার চেষ্টা করেছে পারভেজ আমিন। 

 

চলচ্চিত্র তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন সেটির অগ্রগতি?

চিত্রনাট্য প্রস্তুতিসহ বেশির ভাগ কাজই এগিয়েছে। বিস্তারিত সব জানানো হবে।

 

একই সঙ্গে অভিনয়, নির্দেশনা, লেখালেখি এবং ভয়েস ওভার কীভাবে সমন্বয় করেন?

এগুলো একেকটা একেক রকম; একই কাজ। সবই ধরা যায় অভিনয়। ভয়েস দেওয়া একটা টেকনিক্যাল বিষয়। মঞ্চ বা ভিজুয়াল মিডিয়ায় অভিনয়, লেখালেখি বা নির্দেশনা যাই করি না কেন, সবই আমার কাছে এক। এসবই আলাদা কোনো কাজ বলে মনে হয় না। আসলে সবই এক কাজ, বিভিন্নভাবে করতে হয়।

 

টিভি নাটকে পেশাদারিত্ব সংকট আছে বলে মনে করেন?

অবশ্যই আছে! এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অথচ এগুলোতে কী চলবে আর কী চলবে না, সে বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। এর দায় কর্তৃপক্ষের। সবাইকে কেন টেলিভিশন চ্যানেল খোলার অনুমতি দিতে হবে? আর আমরা নিজেকে দক্ষ করে তোলার বদলে একে অন্যকে দোষারোপ করছি আর ভিখারির মনোভাব নিয়ে টিভি কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিচ্ছি। মন্দের ভালো খুঁজতে খুঁজতে মন্দের ভিতরে ডুবে গেছি।

 

নতুন মঞ্চকর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মঞ্চকর্মীদের ধরেই নিতে হবে যে, তারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে এসেছে। সে এখান থেকে শুধু আনন্দটাই পাবে। সে যদি শুধু আনন্দ নিয়ে সেটিসফাইড থাকে, তাহলেই সে থিয়েটার করতে পারবে। অন্যথায় তার এটা স্থান নয়। এটা একটা মিশন। মানসিক-শারীরিকভাবে কাজ করার সাধনা থাকতে হবে।

 

মঞ্চকর্মীদের ভিজুয়াল মিডিয়ার প্রতি আকর্ষণ নিয়ে অভিমত...

ভালো করছে, খুবই ভালো করছে। কেন, সবাই গাড়িতে চড়বে-চালাবে আর সে বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে যাবে? তাদের মিডিয়ার ভালো ভালো প্রতিটি সেক্টরে ইনভলভ হওয়া উচিত, টিভি বা সিনেমায় যাওয়া উচিত। তাদেরই তো মূলত কাজ করা দরকার মিডিয়ার সব স্থানে।

 

আপনার শ্রেষ্ঠ কাজ কোনটি?

শ্রেষ্ঠ কাজটা আসলে কারও করা হয় না। শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য শিল্পী অপেক্ষা করে থাকে।

সর্বশেষ খবর