শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন বছরে ওটিটি চ্যালেঞ্জ

নতুন বছরে ওটিটি চ্যালেঞ্জ

করোনাকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিনোদনের নতুন স্বাদ দিয়েছে ওটিটি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ওটিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বেড়েছে দর্শক। মূলধারার চলচ্চিত্রজনরা ছুটছেন এই প্ল্যাটফরমে। তবে নতুন বছরে ওটিটি কতখানি চ্যালেঞ্জিং হবে সেটাই দেখার বিষয়। এ বিষয় নিয়ে কিছু নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

টেলিভিশনভিত্তিক বিনোদন পার করে দেশের দর্শক ওটিটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একাধিক ওটিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে এগিয়ে নিয়েছে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমগুলো হয়ে উঠেছে দেশে বিনোদনের বড় মাধ্যম। দেশি-বিদেশি নতুন নতুন ওটিটি প্ল্যাটফরম আনছে নতুন কনটেন্ট। টিভি নাটক ও দেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা ধীরে ধীরে তলানিতে ঠেকায় ছোট পর্দা থেকে শুরু করে বড় পর্দার প্রথমসারির তারকারা এখন ওটিটিকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই দেশি ওটিটির বাইরে ভিনদেশি প্ল্যাটফরমেও দেশি নাটক, ওয়েব সিরিজ, ফিল্ম আশা জাগানিয়া অবস্থান তৈরি করেছে। বাংলাদেশের শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের ভিন্ন স্বাদের কনটেন্ট বহির্বিশ্বে বেশ প্রশংসিতও হচ্ছে। গত কয়েক বছর এই সাফল্যের চিত্র চোখে পড়লেও নতুন বছরে নির্মাতারা নতুন করে ভাবছেন ওটিটি নিয়ে। আগস্ট ১৪, যদি কিন্তু তবুও, মরীচিকা, সিন্ডিকেট’র পর বছরের শেষ দিকে ‘মায়াশালিক’ ওয়েব ফিল্ম নিয়ে আলোচনায় ছিলেন নির্মাতা শিহাব শাহীন। নতুন বছরে ওটিটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই নির্মাতা জানালেন ভিন্ন কথা, ‘দুই দিন আগে বাংলাদেশে জি-ফাইভ বন্ধ হয়ে গেছে। এটা কিন্তু ভালো বিষয় নয়! তারপরও নতুন বছরে ওটিটির চ্যালেঞ্জ থাকবে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো। ইনভেস্ট তো হচ্ছে। বিনিয়োগ তো উঠে আসছে না। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কনটেন্ট তৈরির প্রতি জোর দেওয়া দরকার। ওটিটিতে নতুন নতুন ভালো কনটেন্ট দিয়ে লাইব্রেরি গড়া, ক্যাটালগ তৈরি, বাজার বড় করা, দেশের বাইরে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো ও সাবস্ক্রিপশন সহজ করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমি দেখেছি, দেশের বাইরের অনেকে আমাদের কনটেন্ট দেখতে চায় কিন্তু সাবস্ক্রিপশন সহজ নয় বলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে ভারতীয়রা সহজে সাবস্ক্রিপশন করতে পারছে না। অন্যদিকে পেমেন্ট সিস্টেমও জটিল। শুধু বিশ্বমানের কনটেন্ট তৈরি করলেই হবে না, সেটার বাজার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে আমাদের।’

এদিকে ওটিটিতে স্বতন্ত্র ধারার কাজের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে আস্থা তৈরি করে নিয়েছেন আশফাক নিপুণ। কষ্টনীড়’র পর এপার-ওপার বাংলায় তিনি বহুল আলোচিত হয়েছেন তার সুনিপুণ ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’ ও ‘সাবরিনা’র মাধ্যমে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তিনি সামনে মহানগর-এর অন্তিম পর্ব নিয়েও হাজির হবেন। নতুন বছরে ওটিটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই নির্মাতা জানান, ‘নতুন বছরটি চ্যালেঞ্জিং হবে ওটিটির জন্য। আমি সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ দেখি। প্রথমটি হচ্ছে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়টি ক্রিয়েটিভ চ্যালেঞ্জ। নতুন করে নীতিমালা আসছে। এই নীতিমালায় ফিল্ম মেকারদের গল্প বলার স্বাধীনতা বা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। আমি যেমনটি মহানগর নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতায় পড়েছিলাম। অন্যদিকে আমার মহানগর নিয়ে বা শাওকীর তাকদির নিয়ে দর্শকদের প্রচুর প্রত্যাশা দেখেছি। তাই এখনো জানি না আমি মহানগরের মতো আরেকটি প্রজেক্ট বানাতে পারব কি না অথবা শাওকী তাকদিরের মতো কনটেন্ট বানাতে পারবে কি না-এটা কিন্তু নির্মাতাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যেটাকে আমি বলছি ক্রিয়েটিভ চ্যালেঞ্জ।’

নতুন বছরে গল্প বলার স্বাধীনতা চেয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘নেটফ্লিক্সের নির্মাতা যে স্বাধীনতা নিয়ে সিনেমা বানান, আমি আমার দেশের কনটেন্ট সেখানে দিতে চাইলে সে স্বাধীনতায় বানাতে পারব না। এ সময় সেই স্বাধীনতা প্রয়োজন। আর অন্তত অর্ধেক অনুদান নতুন নির্মাতাদের দেওয়া উচিত। তাহলে ভালো ভালো গল্প উঠে আসবে পর্দায়। ফিল্মমেকার সব সময় প্ল্যান করেন, তার গল্পটা কোথায় দেখালে ভালো দর্শক রেসপন্স পাবেন। এখন তো মানুষ প্রচুর সময় ব্যয় করে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ভিডিও কনটেন্ট দেখে। এই প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নতুন নির্মাতাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। নতুন দর্শক তৈরি হচ্ছে।’ সৈয়দ আহমেদ শাওকী বলেন, ‘এই নিউ ওয়েব সেই সময়ে বসে বোঝা যায় না। সময় বলে দেবে, এটা নবজাগরণ ছিল কি না। আমাদের কাজগুলো গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার মূল কারণ, গল্পগুলো বাংলাদেশ ও দেশের মানুষকে তুলে ধরছে। দেখার পর মনে হয়, গল্পটা শুধুই বাংলাদেশের।’ রায়হান রাফি বলেন, ‘ওটিটির মাধ্যমে দর্শক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে যারা প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে আসছেন, তাদের একটা বড় অংশ ওটিটি কনটেন্ট দেখা দর্শক। ওটিটি ঘিরে নতুন নতুন নির্মাতা তৈরি হচ্ছে। সেন্সরশিপ দিয়ে এটাকে যেন বাধাগ্রস্ত না করা হয়।’ গোলাম সোহরাব দোদুল বলেন, ‘ওটিটিতে এখন অনেকেই ঝুঁকছেন। কারণ এখানে প্রফেশনালিজমটা আছে। নতুন বছরে নতুনভাবে ভাবতে হবে।’ কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লেনদেনটা যেমন হচ্ছে, ভালো। এভাবে এগিয়ে যেতে পারলে ওটিটিকে আগামীর প্ল্যাটফরম বলা যাবে। তবে যদি এই প্রফেশনালিজম না থাকে তাহলে টিভি নাটকে যে সংকট, ওটিটিও সেই সংকটে পড়বে।’ নুহাশ হুমায়ূন জানান, ‘এ অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলে ওটিটি প্ল্যাটফরম ‘জনরা’ কাজের জন্য খুব ভালো জায়গা।’ গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে থাকতে চাইলে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের কোনো বিকল্প নেই।’

সর্বশেষ খবর