রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপু-বুবলীকান্ডে ফের উত্তাল চলচ্চিত্রাঙ্গন

আলাউদ্দীন মাজিদ

অপু-বুবলীকান্ডে ফের উত্তাল চলচ্চিত্রাঙ্গন

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলী। নায়ক শাকিব খানের দুই সাবেক স্ত্রী। দুজনই শাকিবের সন্তানের মা। স্বাভাবিক সম্পর্ক মতে তাঁরা একে অপরের সতীন। আর সতীন মানে পরস্পরের প্রতি পরস্পর জ্বালামুখী হয়ে থাকা। তাই সতীনে সতীনে ঝগড়া হবে এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে এই দুজনের মধ্যে থেমে থেমে তাই হচ্ছে। তবে এই ঝগড়া মুখোমুখি হচ্ছে না। নানা জায়গায় বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজনকে উদ্দেশ করে অন্যজনের বিরূপ স্ট্যাটাসের মাধ্যমেই হচ্ছে। এভাবেই মাঝেমধ্যে তাঁদের ঝগড়ায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চলচ্চিত্রের ময়দান ও সাধারণ মানুষের মনের উঠানে। সম্প্রতি আবার এমনই ঘটনা ঘটল। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শবনম বুবলীকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন। মুহূর্তেই বিষয়টি ছড়িয়ে যায়। এরপরই শবনম বুবলী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অপু বিশ্বাসকে ইঙ্গিত করে পাল্টা ক্ষোভ ঝাড়লেন। এটিও দ্রুত সময়ে ভাইরাল হয়ে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে বুবলী হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেন, তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কেউ মন্তব্য করলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবেন। নাম প্রকাশ না করে তিনি লিখেন, ‘এসব যে পারে, সে অনায়াসেই লিজেন্ড শাবানা ম্যামের মতো এত সিনিয়র ব্যক্তিত্ব নিয়ে অপমানজনক বেফাঁস মন্তব্য করে বসতে পারে। কঠোর পরিশ্রম করে নিজের মতো এগিয়ে যাওয়া নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে অপমান করে কথা বলে মুখটাকে বিশ্রী করে ব্যঙ্গ করতে পারে। ভালো মনের মানুষ বর্ষা আপুকে নিয়ে অপমানজনক কথা বলতে পারে। মাস্টারমেকার পরিচালক শ্রদ্ধেয় মালেক আফসারী স্যারকে নিয়ে অপমান করে কথা বলতে পারে, যা কি না রীতিমতো তাঁর পারিবারিক শিক্ষাকেই উপস্থাপন করে। এ জন্যই বলে, ব্যবহারেই বংশের পরিচয়।’ ধারণা করা হচ্ছে অপু বিশ্বাসকে উদ্দেশ করেই তিনি এসব লিখেছেন। বুবলী আরও লিখেন, ‘কত বাজে মানসিকতার হলে সে এক নিষ্পাপ বাচ্চাকেও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। আমি মা হিসেবে ভালোবেসে আমার সন্তানকে নিয়ে কী করব বা আমার সন্তানের ভালোর জন্য কী করব, তা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। হু দ্য হেল আর ইউ টক অ্যাবাউট দ্যাট?’ ‘সারাক্ষণ নানা মিথ্যা, বানোয়াট, উসকানিমূলক বিষয়ে কথা বলে, অথচ পরে আবার বলবে, সে ব্যক্তির বিষয়ে কথা বলে না। সারাক্ষণ মানুষকে ছোট করে কথা বলবে, কিন্তু পরে বলবে সে মানুষকে ছোট করে কথা বলে না। একেক সময় একেক রং ধারণ করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নগ্ন খেলা এসব বহুরূপী সস্তা মানসিকতার ব্যক্তিই পারে, লজ্জা।’

 

তিনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছে। আমার সন্তানের তো বোঝার বয়স হয়ে গেছে।  এখন জয়ের বয়সীরা অনলাইনে লেখাপড়া করে। আমি নাম বলব না, একজন তো একটা ভিডিও ছেড়েছেন। জয়ও সেই ভিডিও দেখেছে।
কত বাজে মানসিকতার হলে সে এক নিষ্পাপ বাচ্চাকেও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। আমি মা হিসেবে ভালোবেসে আমার সন্তানকে নিয়ে কী করব বা আমার সন্তানের ভালোর জন্য কী করব, তা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। হু দ্য হেল আর ইউ টক অ্যাবাউট দ্যাট?’
 

এই বিস্ফোরক স্ট্যাটাসে বুবলী কারও নাম উল্লেখ না করলেও নেটিজেনরা মন্তব্য করছেন, অপু বিশ্বাসকে উদ্দেশ করেই স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন তিনি। এখানে শবনম বুবলীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো- আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কারও নোংরা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে আমাকে নিয়ে বা আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কেউ কোনো বেফাঁস মন্তব্য করলে বা কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আমি দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কারণ আমি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিছুদিন পরপর যে ব্যক্তি এসব নোংরা খেলা শুরু করে বা যাদের দিয়ে করায়, তাদের সব কিছু সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রিকা এবং ইউটিউবে রয়েছে; যা ডকুমেন্ট হিসেবে যথেষ্ট। এসব নোংরামি পাত্তা দেওয়ার রুচি থাকে না বলেই এসব নিয়ে আমার কথা বলা হয় না। কিন্তু চুপ থাকাকে যদি সে বা তারা সুযোগ পাওয়া মনে করে তাহলে তা হবে তাদের চরম ভুল। আশপাশে হাজার কিছু হলেও দিনশেষে আমাকে নিয়েই এসব ব্যক্তির ব্যস্ততা। এমনকি নাওয়া-খাওয়া সব থাকে আমার চিন্তায়। এদের রেসপন্স করতেও রুচিতে বাঁধে। আর হ্যাঁ, আমার পারিবারিক শিক্ষা আমাকে কখনই দুমুখো সাপের আচরণ করতে শেখায়নি, সুবিধাবাদী হতে শেখায়নি, ধর্ম নিয়ে একেকবার একেক মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করে বোকা বানাতে শেখায়নি, গিরগিটির মতো রং বদলাতে শেখায়নি, কাউকে ছুরি মেরে পরক্ষণেই নিজের কোনো সুবিধা হবে ভেবে সেই ছুরি মারা জায়গায় ব্যান্ডেজ করতে শেখায়নি, বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে নানা টকশোয় অপমান করে কথা বলে নির্লজ্জের মতো হাসতে শেখায়নি, মানুষকে অসম্মান করতে শেখায়নি, হিংসামী শেখায়নি, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিতে শেখায়নি, কাউকে নানা অপমান করে আবার নিজের স্বার্থে সময় বুঝে প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলতে শেখায়নি, বাস্তব জীবনেও অভিনয় করতে শেখায়নি। তাই আমি হয়তো আপনাদের অনেকের সঙ্গে ইনিয়ে-বিনিয়ে নাটক করতে পারি না। আমি এসব না শিখতে পারার জন্য গর্বিত।  কত বাজে নিচু মানসিকতার হলে সে এক নিষ্পাপ বাচ্চাকেও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। কিছুদিন আগে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে আমার সন্তানকে নিয়ে ক্যামেরার সামনে বাঁদরের মতো মুখ ভেংচি কেটে বাজে মন্তব্য করতে ছাড়েনি। এর আগে শুক্রবার একটি অনলাইনে অপু বিশ্বাসকে নিয়ে ‘কে কাকে ছোট করছে, সেই বোধবুদ্ধি আমার আছে’ শিরোনামে অপুর মন্তব্যে একটি লেখা প্রকাশের প্রায় সাত ঘণ্টা পর তাঁর ফেসবুকে সাড়ে চার শ শব্দের লম্বা স্ট্যাটাস দিয়েছেন চিত্রনায়িকা বুবলী। স্ট্যাটাসটি দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই হাজার হাজার লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় তাতে। এই পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে দুই নায়িকার অনুসারী, ভক্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।  সাহানাজ পারভিন নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘তার ফ্যামিলি শুধু তাকে আরেকজনের সংসার ভাঙার শিক্ষা দিয়েছে, অন্য সবদিক দিয়ে সুশিক্ষিত করেছে। এ জন্যই হালের সব বড়দের তার দলে নিয়ে দল ভারী করছে, এটাই পলিটিক্স।’ সাহানাজের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে মেহেদি নামের একজন লিখেছেন, ‘আপনি ভুল বললেন, বুঝেছেন। কারণ শাকিব বুবলীর কাছে সব লুকিয়ে রেখেছিল।’ আরফিন সামিয়া মন্তব্য করেছেন, ‘আপু, তুমি চুপ থাকলে মনে হয় ভালো। কারণ অপু বিশ্বাস সব সময় চায় তুমি রেগে যাও।’ জনি তালুকদার নামের আরেক অনুসারী অপুর পক্ষ নিয়ে বুবলীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘একা পারবেন না জেনে ফারিয়া, অনন্ত-বর্ষা, শাবানা, শাকিব খান, মালেক আফসারীর ভক্তদের এক করে অপু বিশ্বাসের পেছনে লাগছেন। এমনকি ধর্মের বিষয়টাও টেনে আনলেন। আপনার হচ্ছে শিক্ষিত বুদ্ধি।’ গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুবলীকে ইঙ্গিত করে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘তিনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছে। আমার সন্তানের তো বোঝার বয়স হয়ে গেছে। এখন জয়ের বয়সীরা অনলাইনে লেখাপড়া করে। আমি নাম বলব না, একজন তো একটা ভিডিও ছেড়েছেন। জয়ও সেই ভিডিও দেখেছে। সুতরাং এসব ভিডিওতে তার ওপরও তো প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু আমি তো সেই কাজ করব না। আমি আমার সন্তানকে সঠিক পথে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।’ অপুর বক্তব্য ছিল এমন- ‘আমি মনে করি, আমার পারিবারিক শিক্ষা মানুষকে সম্মান দেওয়া, ক্ষতি করা নয় এবং আমি তা করার চেষ্টা করি। কে কাকে ছোট করছে, সেই বোধবুদ্ধি আমার আছে। আমি অনেকদিন থেকেই এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়া এড়িয়ে চলতে চেয়েছি। কিন্তু সিনেমার মানুষ হওয়ায় মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে টুকটাক তা সামনে চলে আসে।’ ভক্তরা মনে করছেন এই সূত্রে বুবলী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে একটি স্ট্যাটাস দেন। পোস্টটিতে সরাসরি কাউকে অভিযুক্ত না করলেও তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কেউ কোনো ধরনের বেফাঁস মন্তব্য করলে তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কারও নোংরা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে আমাকে নিয়ে বা আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কেউ কোনো বেফাঁস মন্তব্য করলে বা কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আমি দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কারণ, আমি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বুবলী গত বছর শাকিবের আরেক সন্তান শেহজাদ খান বীরকে প্রকাশ্যে আনেন। বীরের খবর প্রকাশ্যে এলেও এতদিন বীরকে নিয়ে কোনোই মন্তব্য করেননি শাকিবের আরেক সন্তান জয়ের মা অপু বিশ্বাস। অপু লিখেন, ‘তিনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছে।’

সর্বশেষ খবর