এ কেমন কাজ! বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা-এফডিসিকে শেষ পর্যন্ত পিকনিক পার্টির কাছে ভাড়া দেওয়া হলো। আর এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র জগতের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করার মরতা ধৃষ্টতা দেখানো হলো। যা চলচ্চিত্র জগতের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এখন ক্ষোভে উত্তাল তারা। সরকারের কাছে অবিলম্বে দায়ীদের শাস্তিও দাবি করেছেন চলচ্চিত্রকাররা।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কর্তাব্যক্তি সিনিয়র চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অন্যায় কাজের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতের মানসম্মান একবারেই ডুবিয়ে দেওয়া হলো। সংস্থাটির নামের মধ্যেই চলচ্চিত্রের উন্নয়নের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কাজের বাইরে এ সংস্থায় পিকনিক করার অনুমতি দিয়ে উন্নয়নের বদলে সংস্থাটির মানের অবনতি ঘটনা হলো। এতে সংস্থার কর্তৃপক্ষ চলচ্চিত্রের ক্ষতি করলেন। যা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কী ঘটেছিল সেদিন
গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এফডিসি যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান সেহেতু সেটিও এ ছুটির আওতায় থাকে। অথচ সেদিন এই চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় প্রায় ৪ হাজার মানুষের মেলা বসে। সেটি ছিল চড়ুইভাতি বা পিকনিকের মেলা। যা এখানে হতে পারে না। কারণ, এটি একমাত্র চলচ্চিত্র উন্নয়ন কাজের জায়গা এবং কেপিআইভুক্ত এলাকা। তারপরও এফডিসির সবচয়ে বড় ‘জসিম ফ্লোর’ ভাড়া দেওয়া হলো পিকনিক স্পট হিসেবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে কেপিআইভুক্ত করা হয়। দেওয়া হয় নিন্ডিদ্র নিরাপত্তা। শুধু ওই এলাকার কাজের ক্ষেত্রেই সেখানে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এফডিসি কর্তৃপক্ষ এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে অনুমিত দিলেন পিকনিক আয়োজনের। শুক্রবার সকাল থেকেই রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এ আনন্দমেলা অনুষ্ঠানের। এফডিসিতে জনসাধারণের প্রবেশের পর যে যার মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো কিছুই নাকি জানেন না এফডিসি কর্তৃপক্ষ। অথচ আগেই এফডিসিতে পিকনিকের ব্যানার টানানো হয় বলে জানা গেছে। জানা যায়, এসএসসি ৯৩ সালের ব্যাচ (স্বপ্নের ৯৩) এই পুনর্মিলনের আয়োজন করে। সরেজমিন দেখা যায়, এফডিসির মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড়েই নানা ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে কখনো এরকম ঘটনা ঘটেনি বিএফডিসিতে। কর্তৃপক্ষ এটা ইচ্ছা করেই অনুমতি দিয়েছেন। কেউ অনুমতি ছাড়া বড় করে এমন আয়োজনের সাহস পেত না।
এ বিষয়ে এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বিক্রয়) ও ল্যাবরেটরি প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি রিয়েলিটি শোর আয়োজন হবে বলে ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি সহযোগিতা করেছেন রউফ নামের একজন প্রোডাকশন ম্যানেজার। নিয়ম মেনে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন, সে জন্য বিষয়টি আমরা অবগত নই। এখানে তো পিকনিক হওয়ার কথাই নয়। নেওয়া হচ্ছে আইনি অ্যাকশন। তারই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে দেওয়া হচ্ছে শোকজ নোটিস।’ নোটিসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এফডিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া। তিনি বলেন, এমডি স্যার ঘটনাটি শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে বলেছেন। সঠিক তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে বলেছেন। মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিয়েলিটি শোর নামে পিকনিক করা প্রতিষ্ঠানের নাম জিসান এন্টারপ্রাইজ। এর কর্ণধারের নাম আবদুর রউফ শিকদার। আমরা প্রথম পর্যায়ে পাঁচ থেকে সাত দিনের সময় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে শোকজ নোটিস দিয়েছি।’ ১০ নভেম্বর এসএসসি ৯৩ ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘স্বপ্নের ৯৩’-এর ব্যানারে এ পিকনিক আয়োজন করে। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হয় আয়োজনটি। তারা সেখানে রান্না করে, খাওয়াদাওয়া করে। সারা দিন পুরো এফডিসিতে ঘুরে বেড়িয়েছে। নানা স্পটে বিনা বাধায় ছবি তুলেছে, ভিডিও করেছে। বিকাশে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে জনপ্রতি ১০২০ টাকা করে রিয়েলিটি শোর নামে পিকনিক আয়োজন করা হয়। যেখানে ছিল দিনভর নাচ, গান, গিফট, খাওয়াদাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরও অনেক আয়োজন। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নির্মাতারা বলছেন, এফডিসি এখন সিনেমার উন্নয়নে নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। গত তিন মাসে বিএফডিসিতে সিনেমার শুটিং হয়েছে মাত্র দুটি। অথচ কেপিআইভুক্ত এলাকায় যেখানে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ সেখানে এমন আয়োজন আইন পরিপন্থী। তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি স্থানে করা এ আয়োজনটির নেতৃত্ব দেন পরিচালক সমিতির সদস্য বিপ্লব শরীফ। অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি মাত্র, এর বেশি কিছু জানি না।