দেশি সংস্কৃতির প্রাণ নিহিত রয়েছে ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবিতে। ষাটের দশকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফোক ছবি ‘রূপবান’ নির্মাণ করেন চিত্রনির্মাতা সালাউদ্দিন। আর এ ছবির ব্যাপক জনপ্রিয়তায় এ দেশ থেকে পাকিস্তানি উর্দু ছবি দূরীভূত হওয়ার দুয়ার খুলে যায়। ১৯৯০ এবং ২০০০ সালের প্রথম দিকেও এ ধরনের ছবি নির্মাণ হয়েছে ও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ধারার ছবি নির্মাণ করে নির্মাতা ও প্রদর্শকরা ব্যবসায়িকভাবে লাভবানও হয়েছেন। তার পরও কেন এখন আর ফোক ফ্যান্টাসি ছবি নির্মাণ হচ্ছে না। চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াতের কথায়, ‘উন্মুুক্ত সংস্কৃতির দুনিয়ায় বর্তমান প্রজন্ম ভিনদেশি সংস্কৃতিতে ডুবে আছে। এতে দেশি সংস্কৃতি থেকে তারা দূরে সরে গেছে। তাই নির্মাতারা লোকসানের ভয়ে এ ঘরানার ছবি নির্মাণে সাহস পান না।’ গ্রামীণ মানুষের জীবনীগাথা এসব চলচ্চিত্রে দুঃখকষ্ট-সুখের সঙ্গে দর্শক নিজেদের একাত্ম করে নিত বলেই একসময় এসব ছবির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ওই সময় ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে ১০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে অন্তত ছয়টিই ফোক ধাঁচের। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের সূচনা যুগ অর্থাৎ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যেসব ছবি নির্মিত হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাই সে সময়কার গ্রামীণ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত। সে সময়কার চলচ্চিত্রগুলোকে এক অর্থে সামাজিক ফোক ধাঁচের চলচ্চিত্র বলা যায়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ লোকজ ধারার চলচ্চিত্রের ধারা প্রচলিত হয় ‘রূপবান’ দিয়ে। ১৯৬৫ সালে পরিচালক সালাউদ্দিন নির্মাণ করলেন বহুল প্রচলিত লোকগাথা নিয়ে চলচ্চিত্র ‘রূপবান’। এটি বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোকে ব্যর্থতার গহ্বর থেকে টেনে তুলল। রূপবানের সফলতায় শুরু হয় বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন একটি অধ্যায়। ১৯৬৬ সালে ইবনে মিজান ‘রূপবান’ চলচ্চিত্রের সিক্যুয়াল ‘আবার বনবাসে রূপবান’ নির্মাণ করেন ও ব্যবসায়িক সাফল্য পান। ঠিক তখন থেকেই চলচ্চিত্রে সিক্যুয়াল ধারা শুরু হয়। এ ধারাটির জন্মও কিন্তু লোকজ ঘরানার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৬ সালে নজরুল ইসলাম ‘আপন দুলাল’, ইবনে মিজান ‘জরিনা সুন্দরী’, সৈয়দ আউয়াল ‘গুনাই বিবি’, আলি মনসুর ‘মহুয়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। রূপবান ছবির অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে পরে ফোক ও ফোক ঘরানার চলচ্চিত্র এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে একটি স্বকীয় জায়গা করে নিতে সমর্থ হয়। ১৯৬৮ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রটি এই উপমহাদেশে এ ধারার সফল চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ইতিহাস হয়ে আছে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক ফোক ঘরানার চলচ্চিত্র ‘সুজন সখী’ ব্যবসায়িকভাবে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমানের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছবিটির কাহিনি ও সংলাপ লেখেন আমজাদ হোসেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্পে নির্মিত হয় ‘সারেং বউ’। তবে উপমহাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যবসাসফল লোকজ ঘরানার চলচ্চিত্র হচ্ছে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের নির্মল প্রেম ও ফোক ঘরানার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করে। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা ব্যবসাসফল ছবি। তা ছাড়া উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসেও ব্যবসাসফল প্রথম ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি। ২০০৫ সালে জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু নির্মাণ করেন গ্রামীণ মানুষের সাধারণ জীবনযাপন ও লোকগাথা নিয়ে ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ নামে ফোক ঘরানার চলচ্চিত্র। এটি দর্শককে দারুণ আনন্দ দিতে সক্ষম হয়। ২০০৭ সালে এ কে সোহেল পরিচালিত ‘খায়রুন সুন্দরী’ নামে ফোক ঘরানার চলচ্চিত্রটিও দর্শকমহলে বেশ প্রশংসিত হয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রটিও লোকজ ধারার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের আরেকটি মাইলফলক। গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটিও ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। বর্তমানে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে লোকজ সংস্কৃতি নেই বললেই চলে। কিছু কিছু চলচ্চিত্রে কয়েকটি দৃশ্যে সামাজিক চালচিত্র ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখা গেলেও সেটা একেবারেই অপ্রতুল। ইতিহাস সৃষ্টিকারী ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘একটা ছবির গল্প এবং সেই গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে কয়েকটি গান একটি ছবিকে সব দিক দিয়ে সফলতা এনে দেয়। আর যে ছবি মাটি মানুষের কথা বলবে সে ছবি অবশ্যই মানুষ দেখবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মানুষ ফোক ঘরানার ছবিই বেশি দেখে। আর এ যাবৎ জনপ্রিয় অভিনেতারা কিন্তু ফোক ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেই খ্যাতি অর্জন করেছেন।’
শিরোনাম
- ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া কি একসঙ্গে হতে পারে
- 'মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে পারব'
- ডায়াবেটিস রোগীর কাঁধে ব্যথা
- গুলশানে চাঁদাবাজি : কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ জড়িত কিনা জানতে তদন্ত চলছে
- রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর
- জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ
- মার্কিন শুল্কহার কমিয়ে আনা রপ্তানি খাতের জন্য সন্তোষজনক : আমীর খসরু
- ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বৈঠকের তদন্ত চলছে : ডিএমপি
- আওয়ামী ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কে এই মেজর সাদিক?
- বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা উচিত: তাসকিন
- সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রদলের ৬ নির্দেশনা
- জুলাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র এক বিস্ফোরণ : ফারুকী
- বেনজীরের ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- প্রতিযোগীদের তুলনায় শুল্কহার কমায় স্বস্তিতে বাংলাদেশ : বিজিএমইএ সভাপতি
- ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে রহস্যময় পোস্ট, রাজনীতিতে নামছেন সালমান?
- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার পথে কোনো বাধা দেখছি না : নজরুল ইসলাম
- ডেঙ্গুতে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮
- পূর্ব শত্রুতার জেরে রাজধানীতে বৃদ্ধা নারীকে পিটিয়ে হত্যা
- এনবিআর-বিআইডব্লিউটিএ’র টানাপোড়েন থাকবে না : নৌ উপদেষ্টা
- বিশ্বের রহস্যময় দেশ তুর্কমিনিস্তান খুলছে পর্যটকদের জন্য দ্বার
ফোক ফ্যান্টাসি ছবি কেন হারিয়ে যাচ্ছে
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর