শোবিজ তারকারা সব সময়ই দর্শকের কাছে অন্য ভুবনের মানুষ। তাদের সাধারণ মানুষ ভাবতে পারেন না দর্শকরা। কিন্তু তারাও যে অন্য দশজন মানুষের মতো এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন আছে সেটি কিন্তু মানতেই হবে। তাদের এই প্রাত্যহিক জীবনযাপনে ঘটে নানা ঘটনা। তারকাদের এমনই কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
মুরগিতে লবণ দিতে ভুলে গেলেন দিলারা জামান
আমার জীবনের প্রথম রান্নাটা ছিল মুরগি। মুরগিতে সব দিয়ে লবণটা যে দেব, তা ভুলে গেছি। সবাই খেতে বসলে আম্মা বললেন, হ্যাঁ ভালো হয়েছে; কিন্তু লবণ দাওনি। বিয়ে হলে যদি এরকম ভুল হয় তাহলে সেখানে দেখবা মজাটা। প্রথম দিনের রান্নার সেই কথাটা এখনো মনে পড়লে খুব হাসি পায়। বললেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামান। তিনি হেসে বলেন, যখন আমার বিয়ে হয় তখন রান্না করতে গিয়ে সত্যি সমস্যায় পড়লাম। কারণ বাসায় তো ওভাবে কখনো রান্না করিনি। বাবুর্চিই রান্না করত। বিয়ের পর আমার স্বামী ফখরুজ্জামান চৌধুরী উনার বন্ধু কবি জিয়া হায়দার ও বুলু বললেন, ‘ভাবি আপনার হাতের রান্না খাব। এ কথা শুনে আমি তো মহাবিপদে পড়ে গেলাম। আমাকে পোলাও রান্না করতে হবে। কিন্তু আমি তো পোলাও রাঁধতে জানি না। পোলাও রান্নার একটা হিসাব আছে। বিশেষ করে পানির পরিমাণ। শেষ পর্যন্ত রেঁধেছি, কিন্তু নরম হয়ে গেছে। জিয়া হায়দার বললেন, ভাবি পোলাও তো নরম হয়ে গেছে। এরপর যখন মায়ের বাসায় গেলাম এবং মাকে এমন দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বললাম, মা শুনে বললেন, তুমি শিখে নেবে না? আম্মা রান্নার পদ্ধতি বলে দিলেন, আমি রেসিপিটা খাতায় লিখে নিলাম। মা বললেন পোলাও রাঁধতে এক কাপ চাল নিলে তার দ্বিগুণ পানি নেবে। অন্য সব বুঝিয়ে দিলেন। এভাবে পোলাও রান্নাটা শিখে নিলাম আমি।
মাকে নিয়ে চম্পার কষ্ট
মায়ের চেয়ে বেশি মধুর আর কোনো শব্দ পৃথিবীতে নেই। মায়ের মতো বড় বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। আমি তো ছোটবেলায় মা হারিয়েছি। মনে পড়ে মা আমাকে কোলে করে, ‘চাঁদের বুড়ি’র গল্প শোনাতেন। কী করতে হবে, কী করতে হবে না, এসব শেখাতেন। মা যেগুলো শিখিয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলো সময়ে সময়ে বাস্তবায়ন করেছি। আমার জীবনের পুরো সময়টা আমি মাকে পাইনি, এ নিয়ে আমার কষ্টের শেষ নেই। আমার জীবনে এমন হলেও সবার তো হয় না। তাদের বলব, মাকে অবহেলা কর না। তাকে সময় দিও। সারা জীবন সে তোমাকে সময় দিয়েছে। বয়স হলে মা আর বাবা দুজনই শিশু হয়ে যায়। তখন তারা কথা বলার লোক খোঁজে। চায় সন্তান তাকে সময় দিক। আমি বলব, কাজ শেষে ঘরে ফিরে মোবাইলে ব্যস্ত না হয়ে সবাই বাবা-মাকে সময় দাও।
স্বপ্নটা পুরো দেখতে পারেননি মৌসুমী
১৯৯২ সালে চতুর্থ ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় পাঠকের ভোটে ‘সেরা সুন্দরী’ হয়েছিলেন মৌসুমী। মজার বিষয় হলো-আনন্দ বিচিত্রা কর্তৃপক্ষের বিচারে মৌসুমী ছিল প্রথম রানার্সআপ কিন্তু সহস্রাধিক পাঠকের ভোটে সে স্থানের পরিবর্তন হয়ে মৌসুমীই সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হন। ফারহানা আজাদ ছন্দা নামে একজন আনন্দ বিচিত্রার বিচারে প্রথম স্থানে ছিল এবং তার প্রাপ্ত পয়েন্ট ছিল ৫৫৮০; কিন্তু পাঠকের রায়ে মৌসুমী তার চেয়ে এগিয়ে পান ৭২২০ পয়েন্ট। পাঠকদের এই রায়ে মৌসুমী হয়ে যান সেরা ফটোসুন্দরী। সেরার রায় ঘোষণার আগের দিন ভোর রাতে নাকি মৌসুমী এ বিষয়ে ঘুমের মধ্যে এক দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন, মৌসুমীর কথায়, ‘স্বপ্নে দেখেছিলাম আমার জায়গায় অন্য কেউ হয়েছে সেরা ফটোসুন্দরী। বিচারকমণ্ডলী কেন এরকম অসুন্দরী একটি মেয়েকে সেরা বেছে নিল আমি বা তৃতীয় মেয়েটি যে খুবই সুন্দরী আমাদের যে কোনো একজন তো অনায়াসে সেরা হতে পারতাম। এই অবিচার কিছুতেই মানা যায় না।’ কিন্তু স্বপ্নটা পুরোপুরি দেখতে পারিনি। ছোটবোন ইরিন জামান আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে জানায় আমিই হয়েছি সেরা ফটোসুন্দরী। বাড়িতে তখন উৎসবের আমেজ বয়ে যায়।
পেটে ভরে না খেলে মাথা ঠিক থাকে না জয়ার
হা হা হা হা। সত্যিই আমি ভাত খাই। শুধু তাই না, আমি প্রচুর খাওয়াদাওয়া করি। খেতে ভালোবাসি। বললেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। তার কথায়, ঢাকায় থাকলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদবাগান থেকে তাজা সবজি নিয়ে আসি। দুপুরে সবজি দিয়ে ভাত খাই। মাঝে মাঝে পোলাও এবং রেডমিট খেতে ইচ্ছে করলে মাকে বলতাম রান্না করে খাওয়ান। অত হিসাব করে খাই না। তবে একটা সময় থেকে রাতে কম খেতে চেষ্টা করছি। আমার ডায়েট চার্ট যদি বলেন তা হলে বলব, নিয়ম মেনে হিসাব-নিকাশ করে খেতে পারি না; বিশেষ করে যখন শুটিং চলে। তাই ঠিক-সঠিক কোনো ডায়েট প্ল্যান নেই। তবে কারিনা কাপুরের ডায়েটিশিয়ান রুজুতা দিবাকরের বই পড়ি। তিনি খুব সুন্দর করে মন ও শরীরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ওজন কমানোর কথা বলেন। কলকাতায় শুটিং থাকলে ডিম সেদ্ধ খেয়ে আবার কচুরি, জিলাপি খাই। শুটিংয়ে গিয়ে বলি, আমি চাইলেও তোমরা আমাকে দুধ-চা দেবে না। শুটিংয়ের সময় আমার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। মনে হয়, খাবার খেলেই চাপ কমে যাবে। আর পেটভরে না খেলে, বিশেষ করে ভাত না খেলে মাথা ঠিকমতো কাজ করে না। এত খেয়েও ওজন বাড়ে না কেন? একটা কাজ অবশ্য আমি করি, নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। সন্ধ্যা ৭টার পরে খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিই। সরভর্তি এক গ্লাস দুধ অবশ্যই পান করি। এর ব্যতিক্রম হয় না।
খাবার নিয়ে অনন্ত-বর্ষার ভালো লাগা
নায়ক অনন্তর জীবনেও মজার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, রাঁধুনি হিসেবে বর্ষা সত্যিই অনন্যা। সব রান্নাতেই ও সমান পারদর্শী। তাই বর্ষাকে নিয়ে আমার মনে পড়ে যায় সেই পুরোনো প্রবাদ, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধতে জানে।’ আমার যদি রাতের বেলায়ও পায়েস বা অন্যকিছু খেতে ইচ্ছে করে সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণভাবে সে তা রান্না করে দেয়। আবারও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন অনন্ত, বললেন ওর রান্নায় আমি এতটাই মুগ্ধ যে, আমি মাঝে মাঝে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে বর্ষার সঙ্গে কোনো খাবার নিয়ে কথা হলে বর্ষা ঠিকই বুঝে ফেলে আমার কী খেতে মন চায়। বাসায় ফিরে দেখি আমি যা খেতে চেয়েছি তা পরম যত্নে রান্না করে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে সে। অনন্তর কথার রেশ ধরে বর্ষা বললেন, আমরা দেশের বাইরে যখন প্রথম মম খেয়েছিলাম খুব ভালো লেগেছিল। তারপর দেশে ফিরে আমি মম বানিয়ে অনন্তকে খেতে দিলাম। সে বিশ্বাসই করতে পারেনি আমি রেস্টুরেন্টের স্বাদ কীভাবে বাসায় নিয়ে এলাম। রান্নার কোনো কাজকেই ভয় পাই না। অনন্ত স্মিত হেসে বললেন, আমি আসলে রান্না করতেই জানি না। এই কাজটা আমার হোম মিনিস্টার মানে বর্ষাই করে থাকে।
অনন্ত বলেন, বর্ষার খুব শখ অন্য সবার হাজব্যান্ডের মতো আমিও যেন মাঝেমধ্যে বাজার করি। ওর শখ পূরণ করার জন্য শুধু বাজারই নয়, নিজের হাতে রান্নাও করেছি।
সেই রান্নাটা ছিল বিফ কারি ও মসুর ডাল। আমার রান্না করা দেখে উচ্ছ্বসিত বর্ষা আগ্রহ নিয়ে খেতে বসল। সে বিফ কারিটা মুখে দিয়েই বলে উঠল ওয়াও।