ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে-খ্যাত অভিনেত্রী কবরীর তুলনা তিনি নিজেই। ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল। ওইদিন মুক্তি পায় কবরী অভিনীত প্রথম ছবি 'সুতরাং'। ছবিটি নির্মাণ করেন সুভাষ দত্ত। এই খ্যাতিমান নির্মাতা চট্টগ্রামের মেয়ে মিনা পালকে কবরী নামে চলচ্চিত্রে আনেন। প্রথম ছবিতেই তার সাবলীল অভিনয় শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও প্রশংসা কুড়ায়। ১৯৬৫ সালে ফ্রাঙ্কফুট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার লাভ করে 'সুতরাং'। কবরীর অভিনয়েরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা হয় উৎসবে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী মিনা পাল চলচ্চিত্রে কবরী নামে অভিনয় শুরু করেন। তার বাবা শ্রী কৃষ্ণ দাস পাল। মা শ্রীমতী লাবণ্যপ্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব মিনা পালের। সত্তর দশকের প্রথম দিকে বিটিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করেন তিনি।
২০০৬ সাল পর্যন্ত শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন কবরী। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাহানা, সোয়ে নদী জাগে পানি, সাত ভাই চম্পা, আবির্ভাব, ময়নামতি, নীল আকাশের নিচে, কত যে মিনতি, দীপ নিভে নাই, দর্পচূর্ণ, আপন পর, স্মৃতিটুকু থাক, জলছবি, জয়বাংলা, রক্তাক্ত বাংলা, তিতাস একটি নদীর নাম, রংবাজ, কাঁচকাটা হীরে, গুণ্ডা, বেঈমান, মাসুদ রানা, অবাক পৃথিবী, সুজন সখী, উপহার, লাভ ইন সিমলা, গোপন কথা, অনুরোধ, তৃষ্ণা, কুয়াশা, দিন যায় কথা থাকে, আরাধনা, বধূবিদায়, কলমিলতা, লালসবুজের পালা, দেবদাস, আমাদের সন্তান, আয়না প্রভৃতি।
১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র 'সারেং বৌ'। এতে 'নবীতুন' চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন কবরী। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে চারবার বাচসাস সম্মাননা পান। তা ছাড়া ২০০৮ সালে এ সংগঠনটি বিশেষ সম্মাননা জানায় কবরীকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রযোজনা করেন 'গুণ্ডা' চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেন আলমগীর কুমকুম।
২০০৬ সালে 'আয়না' ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন কবরী। এতে নিজে অভিনয়ও করেন। এটিই ছিল চলচ্চিত্রে কবরীর শেষ অভিনয়। অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে 'সুতরাং' দিয়ে শুরু করে ২০০৬ সালে 'আয়না'তে এসে শেষ হয় কবরীর অভিনয় যাত্রা।