বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের নীতিমালায় চলচ্চিত্রের শিরোনাম বাংলায় হওয়ার বিধান না থাকায় অবাধে ইংরেজি নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। এতে দেশীয় সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন হচ্ছে বলে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা। এ নিয়ে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ পাতায় 'ইংরেজি নামে অবাধে ছবি নির্মাণ' শিরোনামে এক সংবাদ প্রকাশের পর তা সরকারের নজরে আসে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি ছবির ইংরেজি নাম নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'সাম্প্রতিককালে অনাবশ্যকভাবে বাংলা সিনেমার নাম ইংরেজিকরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢালাওভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইংরেজি নামকরণ বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে চলচ্চিত্রের নামের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অনুসরণ নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।'
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তিটি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নিকট প্রেরণ করা হয়। পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র পরিচালক সমিতি বাংলা চলচ্চিত্রের ইংরেজি নাম প্রদান বন্ধ করে দেয়।
সেন্সর বোর্ড নীতিমালার এসআরও ১৯৮৫-এর ধারা ১ এর উপধারা 'এ'তে বর্ণিত আছে- 'বাংলাদেশ বা এর জনগণের সমসাময়িক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও পোশাকের পরিপন্থী কোনো বিষয় চলচ্চিত্রে থাকতে পারবে না।' চলচ্চিত্রকারদের কথায়- অথচ ভাষাগত ভাবে নামের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের আইনে উল্লেখ না থাকা দুঃখজনক। এতে আইনের ফাঁক গলিয়ে কিছু অসাধু নির্মাতা বাংলাদেশের ছবির নাম ইংরেজি ভাষায় রাখার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। মূলত আশির দশক থেকেই ঢাকার ছবির নামকরণ ইংরেজিতে রাখার প্রবণতা শুরু হয়। ধীরে ধীরে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন বছরে প্রায় ২৫ ভাগ ছবির নামই ইংরেজিতে রাখা হচ্ছে। সেন্সর বোর্ড যদি এই অবস্থা রোধে শীঘ্রই ব্যবস্থা না নেয় তাহলে স্বকীয় সংস্কৃতি হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ কথা জানিয়ে ৭ জুলাই প্রকাশিত সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক, আমজাদ হোসেন, সুচন্দা, ববিতা, চাষী নজরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিনসহ অনেকে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকার দ্রুত সময়ে বাংলা ছবির নামকরণ ইংরেজিতে করা নিষিদ্ধ করায় চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট সবাই সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।