বাংলা সংগীতে তার নামটি অনেক তরুণের স্বপ্নের সূতিকাগার। নিজের মেধা আর মননে হয়ে উঠেছেন এ প্রজন্মের গুরু। আজ ২ অক্টোবর সেই নন্দিত ব্যান্ডশিল্পী জেমসের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। সেই হিসেবে আজকের দিনটি তার ৫০তম জন্মদিন।
জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিলো ফারুক মাহফুজ আনাম। কিন্ত ব্যান্ড সংগীতে তিনি জেমস নামেই পরিচিত। জেমস বর্তমানে নগর বাউল ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিষ্ট। স্বতন্ত্র কন্ঠ এবং স্টাইলের জন্য বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বলিউডেও দারুণ জনপ্রিয় জেমস। ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলের গানের প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ডাক পড়ে এ গুণী শিল্পীর। নওগাঁয় জন্ম নেয়া জেমসের শৈশব বাবার চাকুরী সূত্রে চট্টগ্রামের সৈকতের বালচরেই কেটেছে। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শৈশব থেকেই ব্যান্ড সংগীতের প্রেমে পড়েন জেমস। কিন্তু জেমসের বাবা এগুলো পছন্দ করতেন না। সঙ্গীতের নেশায় তিনি একদিন ঘর ছেড়ে পালিয়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিং-এ ওঠেন। সেখান থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু। তাই জেমসের একটি বিখ্যাত গানে ঠাই পেয়েছে প্রিয় আজিজ বোর্ডিং। বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ডদল। জেমস ছিলেন এই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট।
চট্টগ্রামের ব্যান্ডদল ফিলিংসের মাধ্যমে তিনি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল নগর বাউল। জেমসের গাওয়া বেশীরভাগ জনপ্রিয় গানগুলো লিখেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এছাড়া অনেক গীতিকার তার জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যাদের মধ্যে কবি শামসুর রহমান, শিবলি উল্লেখযোগ্য।
সংগীতে তিনি জিম মরিসন, মার্ক নফলার এবং এরিক ক্লাপটনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের হয়ে প্রথম অ্যালবাম স্টেশন রোড মুক্তি পায়। প্রথম অ্যালবামেই অনেকের নজড়ে আসেন জেমস। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম অনন্যা।
২০০৪ সালে কলকাতার সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টে জায়গা ধরে রাখে।
২০০৬ সালে আবারো বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুইটি হল রিশতে এবং আলবিদা।
গানের পাশাপাশি ২০০০ সালের প্রথম দিকে জেমস পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহন করেন। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্র। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বলিউড চলচ্চিত্র লাইফ ইন এ মেট্রোর কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়। যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র কিছু অভিনয় করেন।
জেমসের প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। ২০০২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান এবং জেমস বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে। যার সাথে ১৯৯৯ সালে একটি কনসার্টে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। জেমসের দুইটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের নাম জান্নাত এবং জাহান ও একমাত্র পুত্র দানেশ।
২০০২ সালে জেমস তার দ্বিতীয় স্ত্রী বেনজির সাজ্জাদকে বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বেনজির সাজ্জাদকে বিয়ের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরে বেনজির নিজেকে প্রাপ্তবয়ষ্ক দাবি করলে জেমস কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জেমস গাজী আহমেদ শুভ্রর সাথে রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন। এই প্রডাকশন হাউস ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বিউটিফুল বাংলাদেশ নামে একটি ভিডিও বিজ্ঞাপন চিত্র তৈরি করে। রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট প্রচুর রিয়ালিটি শো প্রযোজনা করেছে। এর মধ্যে দ্য রকস্টার ২, লাক্স চ্যানেল-আই সুপারস্টার, কে হতে চায় কোটিপতি উল্লেখযোগ্য।
জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গান এর মধ্যে- বাংলাদেশ, জেল থেকে আমি বলছি, মা, দুখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা কতো দিন, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া উল্লেখযোগ্য।
জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯), দুষ্টু ছেলের দল (২০০১) প্রভৃতি।
জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)।
বিডি-প্রতিদিন/০২ অক্টোবর ২০১৪/ আহমেদ