নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন চরম উত্তাল। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আরজু রানা দেউবার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। কিছুদিন আগেও যিনি ছিলেন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, এখন তিনিই গণরোষের শিকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৪ সেপ্টেম্বর এক আনুষ্ঠানিকতা। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আরজু রানা দেউবা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া দুটি নতুন সামরিক বিমান উদ্বোধন করছেন। সেদিন তিনি দুই দেশের শক্তিশালী সম্পর্কের কথা বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নেপালের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। মন্ত্রীর সেই সময়ের ছবিগুলো এখন যেন এক অন্য সময়ের কথা বলছে।
মাত্র চার দিনের মাথায়, অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর, সেই একই মন্ত্রী নিজের বাড়িতে আক্রমণের শিকার হন। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তার কাঠমান্ডুর বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা তাকে ও তার স্বামী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাকে মারধর করছে। গণরোষের মুখে মন্ত্রীকে নিজের জীবনের জন্য আকুতি জানাতে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে ১৯ জন আন্দোলনকারী নিহত হলে পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে ওঠে। এই বর্বরতার প্রতিবাদে জনতা রাস্তায় নেমে আসে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে এবং রাজনীতিবিদদের উপর হামলা শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর দেশের নিয়ন্ত্রণ এখন সেনাবাহিনীর হাতে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী জনগণকে লুটপাট, ভাঙচুর ও হামলা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল আজ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তিনি সকলকে শান্ত থাকার এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
৪ সেপ্টেম্বরের মন্ত্রীর ছবি এবং ৮ সেপ্টেম্বরের রক্তাক্ত মুখের ছবি। এই দুটি দৃশ্য নেপালের দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল