এফডিসিতে সরকারবিরোধী চক্রান্ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কেপিআইভুক্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানে অবাধে চলচ্চিত্র সমিতিগুলো সরকারবিরোধী মিছিল-মিটিং চালায়। সরকারি সিদ্ধান্ত ও সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধেও চলছে অনাস্থা আন্দোলন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নানামুখী বাধার কারণে এফডিসির উন্নয়নকাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দিনের পর দিন। তাই এফডিসি অকেজো সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির দীর্ঘদিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতি আদেশ ২০০৯-১২ এর ৪৯(ক) ধারায় উপমহাদেশীয় ভাষার ছবি আমদানির ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করে ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে। সংশোধিত আমদানি নীতি আদেশের আওতায় প্রথমে তিনটি বাংলা পরে ৯টি হিন্দি ছবি আমদানির জন্য স্থানীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টারপ্রাইজ ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল ঋণপত্র খোলে। ২০১০ সালের ২৫ মে তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানি করলে সেন্সর বোর্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে বিরোধিতা করলেও পরে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে এগুলো মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে 'জোর' ছবিটি মুক্তি দিতে গেলে এফডিসিভিত্তিক চলচ্চিত্র সমিতিগুলো 'চলচ্চিত্র পরিবার' নাম দিয়ে তৎকালীন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে সরকারের অনুমতি ও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ছবিগুলো প্রদর্শন বন্ধের হুমকি দিয়ে আন্দোলনে নামে। এফডিসির মতো একটি কেপিআইভুক্ত এলাকায় বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও অবাধে মিছিল-মিটিং সভা করে। তারা এফডিসির ভিতরে ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে এলসিকৃত ৯টি হিন্দি ছবির মধ্যে ৪টি ছবি আমদানি করা হয় ২০১২ সালের ৩০ জুন। এই ছবিগুলো সেন্সর করতে আইন মন্ত্রণালয় সেন্সর বোর্ডকে নির্দেশ দেয় এবং চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি হিন্দি 'ওয়ান্টেড' ছবিটি মুক্তির দিন ধার্য হলে সমিতিগুলো 'চলচ্চিত্র ঐক্যজোট' গঠন করে এবং বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ মিছিল করে এফডিসিতে। সিনেমা হল থেকে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে এনে তা এফডিসিতে পোড়ায়। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে তখন এ ব্যপারে এফডিসির এমডি হারুন অর রশিদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেন প্রদর্শক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদীপ্ত কুমার দাস। তিনি এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন- বর্তমান এমডি সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে সরকারের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের ভিতর কীভাবে সভা-সমাবেশ মিছিলের মতো কর্মকাণ্ড চালানো বন্ধ করলেন না। তাহলে এফডিসিকে ধ্বংসের তৎপরতার সঙ্গে তিনিও কি যুক্ত! আমরা অচিরেই তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানাব। যাতে ভবিষ্যতে এই সরকারি সংস্থার ক্ষতি করতে কেউ দুঃসাহস না দেখাতে পারে। এ বিষয়ে এফডিসির এমডির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'এফডিসি গ্রেড ওয়ান কেপিআইভুক্ত এলাকা নয়। তাছাড়া অবৈধ হলেও আগেই এখানে সমিতির অফিস করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষে সমিতির কর্মকাণ্ড সবসময় পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যখন এখানে আন্দোলনের অভিযোগ পেয়েছি তা বন্ধের ব্যবস্থা করেছি'।
চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, চিত্রগ্রাহক এবং এডিটর সমিতিগুলো এখনো সরকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। তারা এফডিসিতে বসে নানাবিধ চক্রান্ত করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে গোয়েন্দা সূত্রে। জানা গেছে, এফডিসির ওপর এখন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারি রয়েছে। এদিকে আবারও আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার। তারা বলেন, 'আমরা ওপরের আশ্বাস পেয়ে আপাতত চুপ আছি। যদি আবার উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি কিংবা প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামব।'
আন্দোলন ছাড়াও এফডিসিকে অকেজো করে রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে গোয়েন্দা সূত্রে।
পুরো পরিস্থিতি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আমি এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পারব না। খোঁজখবর নিচ্ছি। সবকিছু জেনে তারপর মন্তব্য করব'।