দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস প্রায়। পাইরেসির জাঁতাকলে পিষ্ট সবাই। একই সঙ্গে অডিও কোম্পানিগুলো শুরু করেছে নতুন প্রতারণা। তাদের প্রতারণায় চলছে একচ্ছত্র স্বেচ্ছাচারিতা। এখন আর কোনো কোম্পানি অ্যালবাম প্রযোজনা করছে না। তারা শিল্পীদের টাকাতেই শিল্পীদের অ্যালবাম প্রকাশ করছে। পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত অনেক শিল্পীও এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই বেশিরভাগ শিল্পীই অ্যালবাম প্রকাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পুরনো শিল্পীদের ক্ষেত্রেই যদি চিত্রটা এমন হয়, তবে নতুন শিল্পীদের অবস্থা সহজেই ধারণা করা যায়। কোনো নতুন শিল্পীই নিজের টাকা বিনিয়োগ ছাড়া অ্যালবাম প্রকাশ করতে পারছেন না। তারা নিজের খরচে গীতিকার-সুরকার এবং মিউজিশিয়ানদের দিয়ে গান রেকর্ড করান। তারপর কোম্পানির কাছে গিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের সব খরচ নিজে বহন করে অ্যালবাম প্রকাশ করেন। বিনিময়ে নিজের সংগ্রহে নিজের অ্যালবাম সংরক্ষণ ছাড়া আর কোনো তৃপ্তিই পান না। যদি কারও অ্যালবাম বিক্রি হয়, সেই টাকাও অডিও কোম্পানিগুলো নিজেদের পকেটে রেখে দেন। শিল্পীকে সোজা বলে দেন, তার অ্যালবাম বিক্রি হচ্ছে না। আর এ পরিস্থিতিতে সারমর্ম দাঁড়িয়েছে- গান বাজুক বা না বাজুক, কণ্ঠে সুর থাকুক বা না থাকুক, গানের মান থাকুক বা না থাকুক- অ্যালবাম প্রকাশ করে ফেলছে যে কেউ। আর তাই চারদিকে মানহীন গানের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় দেশের অধিকাংশ তারকা শিল্পীও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অডিও কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে। এ প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, 'আমাদের বুঝতে হবে কারা শখের বশে অ্যালবাম করবে আর কে শিল্পী হওয়ার জন্য অ্যালবাম করবে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু আমাদের বোধ না থাকায় টের পাচ্ছি না।'
অন্যদিকে ফাহমিদা নবী বলেন, 'যারা শখে গান করে আর যারা পেশাদারিভাবে গান করে-সবাইকে এক কাতারে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। যারা শখে গান করে তারা নিজের টাকায় নিজের গান করতেই পারে। কিন্তু যারা পেশাদারিভাবে গান করতে চায় তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এ ছাড়া শিল্পীদের একটি তালিকা তৈরির কমিটি থাকতে হবে। এখানে শিল্পীদের বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা হবে। একটি অ্যালবাম করা এত সহজ না। এলাম একটি অ্যালবাম করলাম, আবার চলে গেলাম। এটা হতে পারে না। শিল্পী হওয়া অনেক কঠিন'।
শাফিন আহমেদ বলেন, 'আমি এ বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে দেখাতে চাই। প্রথম অবস্থায় হয়তো নতুন শিল্পীর অ্যালবামের খরচ কোনো অডিও প্রতিষ্ঠান নেবে না। কিন্তু শিল্পীর টাকায় শিল্পীর প্রচারণা করাটা দুঃখজনক। একটা সময় ছিল অডিও প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের স্টুডিও খরচ থেকে শুরু করে অ্যালবামের সব ধরনের খরচ বহন করত। কিন্তু এখন তা আর দেখা যায় না। আমি শিল্পীদের একটি কথা বলতে চাই, যদি আপনি নিজের টাকায় অ্যালবাম করেন, যদি আপনি চান শ্রোতারা আপনার গানগুলো শুনুক, তবে আপনি কেন ব্যবসা করার জন্য আপনার অ্যালবাম অসাধু কোম্পানির হাতে তুলে দেবেন! আপনি নিজেও জানেন, এখন আর কেউ অ্যালবাম কিনে শোনে না। আপনি আপনার অ্যালবাম অনলাইনে প্রকাশ করুন। আমি মনে করি যাদের ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা আছে তারা জানেন কী করে অনলাইনে নিজের অ্যালবাম প্রকাশ করতে হয়'।
সিনিয়র শিল্পীরা অডিও কোম্পানির ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের কথায়- এখন আর ভালো প্রযোজক-প্রকাশক নেই। সবাই অসাধু পন্থায় টাকা কামাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই শিল্পীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করছেন। আর তাই ঠিকমতো গান না জানা অশিল্পীদের অ্যালবামও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই এর থেকে মুক্তি চান সবাই।